আজকাল ওয়েবডেস্ক: আধুনিক জীবনে দুশ্চিন্তা ও মানসিক উদ্বেগ অনেকেরই নিত্যসঙ্গী। কর্মক্ষেত্রে বা দৈনন্দিন জীবনে সাময়িক উদ্বেগ থাকবেই। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী বা ক্রনিক দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর নানাবিধ গুরুতর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। উদ্বেগ বা অ্যাংজাইটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকেও ধীরে ধীরে দুর্বল করে তোলে।
১. হৃদযন্ত্র ও রক্তসংবহনতন্ত্র: দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপে শরীর ক্রমাগত অ্যাড্রেনালিন ও কর্টিসোলের মতো স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ করে। এর ফলে হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, যা উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এই হরমোনগুলি রক্তনালীরও ক্ষতি করে, ফলে ধমনী শক্ত ও সংকীর্ণ হয়ে যেতে পারে।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। কর্টিসোলের প্রভাবে শ্বেত রক্তকণিকার কার্যকারিতা কমে যায়, ফলে শরীর সহজেই বিভিন্ন সংক্রমণ দ্বারা আক্রান্ত হয়। অসুস্থতা থেকে সেরে উঠতেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগে।
৩. পরিপাকতন্ত্র: মানসিক উদ্বেগ পরিপাকতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটায়। এর ফলে পেটে ব্যথা, অ্যাসিডিটি, বুকজ্বালা, বদহজম, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম-এর মতো উপসর্গ এবং ক্ষুধামান্দ্য বা অতিরিক্ত ক্ষুধার মতো সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদী ভাবে এটা চলতে থাকলে গ্যাস্ট্রিক আলসার এবং অন্ত্রের প্রদাহের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়।
৪. স্নায়ুতন্ত্র ও ঘুম: দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ স্নায়ুতন্ত্রকে অতিরিক্ত উত্তেজিত করে রাখে। এর ফলে মাথাব্যথা, মাইগ্রেন, মনোযোগের অভাব এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাসের মতো সমস্যা হয়। ঘুমের চক্র ব্যাহত হয়ে অনিদ্রা দেখা দেয়, যা সার্বিক মানসিক স্বাস্থ্য, যেমন - বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশনের প্রবণতা আরও বাড়িয়ে তোলে।
৫. পেশী, ত্বক ও অন্যান্য প্রভাব: মানসিক চাপের সময় পেশী শক্ত হয়ে থাকায় ঘাড়ে, কাঁধে ও পিঠে ক্রনিক ব্যথা হতে পারে। সবমিলিয়ে দুশ্চিন্তা ও মানসিক উদ্বেগ যে কেবল মানসিক শান্তি কেড়ে নেয় তা নয়, বরং আমাদের শরীরকেও নানাভাবে অসুস্থ ও দুর্বল করে তোলে।
