ধরেই পরিচিত। এর মধ্যে আদা আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। প্রবল প্রদাহনাশক হওয়ার পাশাপাশি এটি হজমেও সাহায্য করে।

তবে আদা ছাড়াও এমন বেশ কিছু পরিচিত মশলা আছে, যেগুলি খাবারের পর হজমে সহায়ক এবং পেট ফোলা কমাতে কার্যকর। গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও হেপাটোলজি বিভাগের পরামর্শদাতা চিকিৎসক ডা. গিরিশ পি বীরান্না বিস্তারিত জানিয়েছে।

ডা. গিরিশ বলেন, “শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মশলা শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্যই নয়, হজম-সহ নানা স্বাস্থ্যগত উপকারের জন্যও ব্যবহার হয়ে আসছে। নিয়মিত রান্নায় বা হার্বাল পানীয় হিসাবে কিছু ঐতিহ্যবাহী মশলা ব্যবহার করলে অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় তিনি যে পাঁচটি মশলা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন, সেগুলি হল—

জিরে:
জিরে হজমশক্তি বাড়ানোর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। ডা. গিরিশের মতে, এটি হজমকারী এনজাইমের উৎপাদন বাড়ায়, ফলে খাবার দ্রুত হজম হয় এবং পুষ্টি শোষণ ভালভাবে হয়। জিরেতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও ‘থাইমল’ নামক উপাদান পাকস্থলীতে অ্যাসিড, পিত্তরস ও হজম এনজাইম নিঃসরণে সাহায্য করে। এছাড়া এটি গ্যাস তৈরি কমায় এবং পেট ফোলা ভাব দূর করে। খাবারের পর হালকা গরম জিরে জল পান করলে উপকার পাওয়া যায়।

মৌরি:
গ্যাস, পেট ফোলার সমস্যায় মৌরি অত্যন্ত কার্যকর। ডা. গিরিশ জানান, মৌরিতে থাকা ‘অ্যানিথল’ নামক উপাদান পাকস্থলীর প্রদাহ কমায় এবং অন্ত্রের পেশি শিথিল করে। বহু সংস্কৃতিতে খাবারের পর মৌরি চিবনোর চল রয়েছে, যা হজমে সাহায্য করার পাশাপাশি মুখের দুর্গন্ধও দূর করে।

হলুদ:
হজমের সমস্যায় হলুদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডা. গিরিশ বলেন, হলুদ পিত্তরস উৎপাদন বাড়িয়ে ফ্যাট হজমে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের প্রদাহ কমায়। হলুদের সক্রিয় উপাদান কারকিউমিন পেট ফোলা ও গ্যাসের উপসর্গও কমাতে সাহায্য করে।

দারচিনি:
স্বাদ ও সুগন্ধের জন্য পরিচিত দারচিনি হজমের ক্ষেত্রেও উপকারী। ডা. গিরিশের মতে, এটি গ্যাস ও পেট ফোলা কমায়, হজম এনজাইম সক্রিয় করে। খাবারের পর রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও উপযোগী।

জোয়ান 
দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় রান্নায় জোয়ানের ব্যবহার রয়েছে। ডা. গিরিশ জানান, এতে থাকা থাইমল পাকস্থলীতে অ্যাসিড নিঃসরণ বাড়িয়ে হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে। জোয়ান অ্যাসিডিটি, গ্যাস ও খাবারের পর ভারী ভাব কমাতে কার্যকর এবং এতে হালকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণও রয়েছে, যা অন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

সবশেষে ডা. গিরিশ সতর্ক করে বলেন, “মশলা কখনওই চিকিৎসার বিকল্প নয়। তবে সুষম খাদ্যের সঙ্গে এগুলি ব্যবহার করলে দৈনন্দিন হজমের সমস্যায় মৃদু উপকার পাওয়া যায়। সাধারণ পরিমাণে এগুলি নিরাপদ হলেও যাঁদের অ্যাসিড রিফ্লাক্স, আলসার বা পেটের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের অতিরিক্ত মশলা এড়িয়ে চলা উচিত।”