শীতের সময়টা অনেকের জন্যই বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। যাদের শরীরে আগে থেকেই দুর্বলতা রয়েছে, তাদের জন্য এই সময় আরও কষ্টদায়ক হয়। বেশিরভাগ মানুষই শীতকালে দুর্বল স্নায়ুর সমস্যায় ভোগেন — ফলে হাত-পা অবশ লাগে, কাজ করতে গেলেও মনে হয় যেন হাত-পায়ে শক্তি নেই। আসলে এর মূল কারণ হলো স্নায়ু দুর্বল হয়ে পড়া।

জানলে অবাক হবেন, মানুষের শরীরে প্রায় ৯৬ হাজার কিলোমিটার লম্বা স্নায়ু রয়েছে, যা শরীরের প্রতিটি অংশ থেকে সঙ্কেত মস্তিষ্কে পৌঁছে দেয় এবং মস্তিষ্কের নির্দেশ শরীরের প্রতিটি কোষে পাঠায়। স্নায়ু যখন দুর্বল হয়ে যায়, তখন এই যোগাযোগে ব্যাঘাত ঘটে এবং ফলে হাত-পা বা শরীরের অংশে শক্তি কমে যায়। স্নায়ু দুর্বল হওয়ার পিছনে নানা কারণ থাকলেও, সবচেয়ে বড় কারণ হল ভিটামিন বি১২ এবং আয়রনের ঘাটতি। তাই এমন খাবার খাওয়া উচিত, যেগুলো এই পুষ্টিগুণে ভরপুর। নিচে এমন ৫টি খাবারের কথা বলা হল, যা নিস্তেজ স্নায়ুতে নতুন প্রাণ আনতে পারে।

ডালিম
দুর্বল স্নায়ু শক্তিশালী করতে ডালিম অসাধারণ কাজ করে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহনাশক গুণ স্নায়ু মজবুত করতে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্কের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে, শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায় এবং স্নায়ুর কার্যক্ষমতা বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ডালিম স্মৃতিশক্তি উন্নত করে, উদ্বেগ কমায় এবং বয়সজনিত মানসিক সমস্যার ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

বিট
বিট স্নায়ু এবং মস্তিষ্কের জন্য খুব উপকারী। এতে থাকা নাইট্রেট শরীরে গিয়ে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করে, যা রক্তনালিকে প্রসারিত করে এবং রক্তপ্রবাহ বাড়ায়। এতে থাকা পটাশিয়াম এবং অন্যান্য মিনারেল স্নায়ু ও পেশির কার্যকারিতা উন্নত করে। নিয়মিত বিট খেলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও পুষ্টির প্রবাহ বেড়ে যায়।

বাদাম এবং বীজজাতীয় খাবার
কাজুবাদাম, আখরোট, পেস্তা, কিশমিশ, খেজুর, কুমড়োর বীজ, চিয়া সিডস— এইসব বাদাম এবং বীজে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ই, ভিটামিন বি১২ ও নাইট্রিক অক্সাইড। নিয়মিত এই খাবার খেলে স্নায়ুর দুর্বলতা কমে এবং স্নায়ুর সুরক্ষা বাড়ে।


তেলযুক্ত মাছ
স্যালমন, টুনা, সার্ডিন, ম্যাকরেল প্রভৃতি তেলযুক্ত মাছ স্নায়ুর জন্য খুবই উপকারী। এই মাছে থাকা ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড স্নায়ু পুনর্গঠনে সাহায্য করে, প্রদাহ কমায় এবং স্নায়ুর আবরণ মাইলিন শিথ শক্তিশালী রাখে। নিয়মিত এই মাছ খেলে স্নায়ুজনিত ব্যথা ও অবশ ভাব থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।


গ্রিন টি
শীতকালে প্রতিদিন গ্রিন টি খেলে স্নায়ু মজবুত হয়। এতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড যৌগ স্নায়ুকে পুনর্জীবিত করতে সাহায্য করে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে স্নায়ুকে সক্রিয় রাখে। নিজের পছন্দমতো নানা ফ্লেভারে গ্রিন টি পান করা যেতে পারে।

শীতকালে স্নায়ু দুর্বলতার প্রধান কারণ হল ভিটামিন বি১২ এবং আয়রনের ঘাটতি। তাই নিয়মিত এই খাবারগুলি খেলে শরীরের স্নায়ু সক্রিয় ও মজবুত থাকে।