আজকাল ওয়েবডেস্ক: স্মার্টফোনের অবিরাম নোটিফিকেশন, সোশ্যাল মিডিয়ার হাতছানি আর একরাশ ডিজিটাল তথ্যের ভিড়ে মনোযোগ হারিয়ে যাওয়াটা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। কর্মক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কোনও কাজ হোক বা পড়ুয়াদের পরীক্ষার প্রস্তুতি, একটানা মনোযোগ ধরে রাখাটা যেন এক কঠিন সাধনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনোবিদরা জানাচ্ছেন, এর জন্য কেবল প্রযুক্তিকে দোষারোপ করে লাভ নেই। আসল সমস্যা হল, আমাদের মস্তিষ্ক ক্রমশ স্বল্পমেয়াদী উত্তেজনায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। তবে আশার কথা হল, সঠিক অভ্যাস ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মস্তিষ্ককে সহজেই শৃঙ্খলার পথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। ঠিক যেমন শরীরচর্চার মাধ্যমে পেশিকে শক্তিশালী করা যায়, তেমনই কিছু বৈজ্ঞানিক কৌশল মেনে চললে মনোযোগকেও তীক্ষ্ণ করে তোলা যায়।
আরও পড়ুন: পেশি ফোলাতে স্তনদুগ্ধ খাচ্ছেন বডিবিল্ডাররা, প্রাপ্তবয়স্কদের এই দুধ কতটা উপকারী? কী বলছে বিজ্ঞান?

মনোযোগ বৃদ্ধির বৈজ্ঞানিক কৌশল
বিশেষজ্ঞদের মতে, মনোযোগ কোনও ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতা নয়, এটি একটি অভ্যাস। কয়েকটি সহজ পদ্ধতি নিয়মিত অনুসরণ করলেই এর সুফল মিলবে হাতেনাতে।
১। পোমোডোরো টেকনিক: মনোযোগ ধরে রাখার এটি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং কার্যকর পদ্ধতি। এই কৌশল অনুযায়ী, যে কোনও কাজকে ২৫ মিনিটের ছোট ছোট পর্বে ভাগ করে নিতে হবে। প্রতিটি পর্বের পর ৫ মিনিটের বিরতি নেওয়া আবশ্যক। ঘড়ি ধরে ২৫ মিনিট সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কাজ করুন এবং এই সময়ে ফোন বা অন্য কোনও জিনিস থেকে দূরে থাকুন। ৫ মিনিটের বিরতিতে একটু হাঁটাচলা বা জলপান করে আবার পরের পর্ব শুরু করুন। পরপর চারটি পর্ব শেষ হলে একটি লম্বা (১৫-২০ মিনিট) বিরতি নিন। এই পদ্ধতি মস্তিষ্ককে একটানা চাপের অনুভূতি থেকে মুক্তি দেয় এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ায়।
২। ডিজিটাল কোলাহল কমানো: মনোযোগের সবচেয়ে বড় শত্রু হল ডিজিটাল বিক্ষেপন। কাজের সময় বা পড়ার সময় ফোনের অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন বন্ধ করে দিন। সম্ভব হলে ফোনটি অন্য ঘরে বা দৃষ্টির আড়ালে রাখুন। কম্পিউটারে কাজ করার সময় অপ্রাসঙ্গিক ট্যাবগুলি বন্ধ করে দিন। এই ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ মস্তিষ্ককে একটি নির্দিষ্ট কাজে নিবিষ্ট থাকতে সাহায্য করে।
৩। একবারে একটি কাজ: অনেকেই মনে করেন মাল্টিটাস্কিং বা এক সঙ্গে একাধিক কাজ করলে সময় বাঁচে। মনোবিদরা জানাচ্ছেন, এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। একসঙ্গে একাধিক কাজ করতে গেলে মস্তিষ্ককে ঘন ঘন এক বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে মনোযোগ দিতে হয়, যা তার কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় এবং ভুলের সম্ভাবনা বাড়ায়। তাই এক সময়ে কেবল একটি কাজেই সম্পূর্ণ মনোযোগ দিন। কাজটি শেষ হলে তবেই অন্য কিছুতে হাত দিন।
৪। সংক্ষিপ্ত ধ্যানের অভ্যাস: প্রতিদিন মাত্র ১০-১৫ মিনিট ধ্যান করলে মস্তিষ্কের মনোযোগ কেন্দ্রে অবিশ্বাস্য পরিবর্তন আসতে পারে। একটি শান্ত জায়গায় বসে চোখ বন্ধ করে নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করুন। মন এদিক-ওদিক চলে গেলেও জোর না করে ধীরে ধীরে তাকে আবার শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে ফিরিয়ে আনুন। এই ছোট্ট অভ্যাসটি মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা বাড়ায়।
৫। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পুষ্টি: মস্তিষ্ককে সচল রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই। দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। এর পাশাপাশি, শরীরকে সতেজ রাখতে পর্যাপ্ত জলপান এবং সুষম আহার করাও জরুরি।
প্রথমেই হয়তো এই সব কৌশল আয়ত্ত করা কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু ধৈর্য ধরে নিয়মিত অভ্যাস চালিয়ে গেলে কিছুদিনের মধ্যেই এর ইতিবাচক প্রভাব চোখে পড়বে। মনে রাখতে হবে, বিক্ষিপ্ত মনকে বশে আনার চাবিকাঠি আপনার হাতেই রয়েছে।