ডায়াবেটিস বর্তমানে শুধু ভারতে নয়, সারা পৃথিবীতেই ভয়াবহ আকার নিয়েছে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোগীদের নিয়মিত ওষুধ, ব্যায়াম ও ডায়েট মেনে চলতে হয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, সহজলভ্য পেয়ারার পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
কীভাবে কাজ করে পেয়ারার পাতা
বিজ্ঞানীদের মতে, পেয়ারার পাতায় এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যা খাবার খাওয়ার পর হঠাৎ করে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়া রোধ করে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, পেয়ারার পাতা থেকে তৈরি চা বা নির্যাস খাবারের সঙ্গে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা ২০–৩৮% পর্যন্ত কমে।আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এটি কার্যকারিতায় অনেকটা ডায়াবেটিসের ওষুধ ভোগলিবোস-র মতো হলেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে খুব কম। তাই এটি রোগীদের জন্য একটি নিরাপদ ভেষজ বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়।
আরও পড়ুনঃ খাওয়ার পর নাকি খালি পেটে, কোন সময়ে হাঁটলে ওজন কমবে দ্রুত? জানেন শরীর ভাল রাখতে হাঁটার সঠিক সময় কখন?
এছাড়া ইনসুলিন প্রতিরোধ কমায় পেয়ারা পাতা। একাধিক গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, পেয়ারার পাতা ইনসুলিন প্রতিরোধ কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে শরীরের গ্লুকোজ মেটাবলিজম বাড়ে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।পেয়ারার পাতায় রয়েছে প্রচুর ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, ভিটামিন সি এবং নানা ধরনের পলিফেনল। এগুলো শুধু ডায়াবেটিস নয়, হৃদযন্ত্রের সুস্থতা, হজমশক্তি বৃদ্ধি এবং ওজন নিয়ন্ত্রণেও কার্যকর বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
 
 দীর্ঘমেয়াদি উপকারিতা
শুধু খাওয়ার পর শর্করা নিয়ন্ত্রণই নয়, নিয়মিত ৮–১২ সপ্তাহ ধরে পেয়ারার পাতার চা খেলে আরও কিছু উপকারিতা দেখা যায়। যেমন-
 
 •    কোলেস্টেরল  নিয়ন্ত্রণ করে: শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়লে তা হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ায়। আসলে কোলেস্টেরল দেহে রক্ত চলাচলে বাধা দেয়। যা থেকে অনেক স্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দেয়। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পেয়ারা পাতার চা কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেকাংশে কমাতে পারে।
 
 •    পেটের জন্য উপকারীঃ গ্যাস, অম্বল, কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতেও পেয়ারা পাতার চা কার্যকরী। প্রতিদিন পেয়ারা পাতা দিয়ে তৈরি এক কাপ চা আপনাকে পেটের নানা রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। এতে উপস্থিত অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল বৈশিষ্ট্য কেবল শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় না, পেটকে ঠান্ডা করে।

 
 •    ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে: মেদ ঝরানোর জন্য পেয়ারা পাতার চা ম্যাজিকের মতো কাজ করে। এটি মেটাবলিসম বাড়ায় এবং ক্রেভিং কমিয়ে দেয়। দিনে দু’বার পেয়ারা পাতার চা খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
 
 •    ঋতুস্রাবকালীন যন্ত্রণা কমায়ঃ ঋতুস্রাবের যন্ত্রণায় অনেকে ব্যথানাশক ওষুধ খান। কিন্তু এই ধরনের ওষুধের অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। বদলে পেয়ারা পাতার চা খেলে স্বস্তি দিতে পারেন।
 
 •    ত্বকের জেল্লা বাড়ায়ঃ পেয়ারা পাতার চা খেলে মুখের দাগ, ব্রণ থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। এই চা ত্বক থেকে টক্সিন বের করে দেয়। ফলে প্রাকৃতিকভাবে জেল্লা ফুটে ওঠে।  
কীভাবে পেয়ারা পাতা চা তৈরি করবেন
চা তৈরির জন্য প্রয়োজন কিছু পেয়ারা পাতা, সাধারণ চা পাতা, দেড় কাপ জল এবং মধু। প্রথমে পেয়ারার পাতাগুলি ভাল করে ধুয়ে ফেলুন। সসপ্যানে দেড় কাপ জল দিয়ে ২ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এবার ওই জলে যোগ করুন পেয়ারা পাতা এবং স্বাদ ও রঙের জন্য সাধারণ চা পাতা। ১০ মিনিটের মতো ফুটিয়ে ছেঁকে নিলেই আপনার পেয়ারা পাতা চা প্রস্তুত। চাইলে মিষ্টি স্বাদের জন্য মধু যোগ করতে পারেন।
