কয়েকদিন আগে গবেষকরা জানিয়েছিলেন, প্লাস্টিকের বোতলে মিশে থাকে লক্ষ লক্ষ গুঁড়ো প্লাস্টিকের কণা। আবার বিভিন্ন খাবার থেকেও দেহে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করতে পারে। আর এবার গবেষণায় আরও এক চমকে দেওয়া তথ্য উঠে এসেছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, আপনি প্রায়ই যে চুইংগাম চিবোতে থাকেন, তার মাধ্যমেও শরীরে ঢোকে শয়ে শয়ে প্লাস্টিকের কণা।
সব বয়সের মানুষের, বিশেষ করে ছোটদের মধ্যে চুইংগাম খাওয়ার অভ্যাস দেখা যায়।কিন্তু এই চুইংগাম চিবানো যে মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। আসলে চুইংগাম মূলত তিনটি জিনিস দিয়ে তৈরি। একটি রাবারি বেস (পলিমার), মিষ্টি এবং স্বাদ বর্ধক উপাদান। যা চিবানোর সময় মাইক্রোপ্লাস্টিক নির্গত করে। গবেষকরা বাজার চলতি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চুইংগাম চিবানোর পর লালা পরীক্ষা করেছেন। সেই পরীক্ষার ফলাফলই সকলকে হতবাক করে দিয়েছে।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, চুইংগামে উপস্থিত হাজার হাজার ক্ষুদ্র মাইক্রোপ্লাস্টিক লালায় দ্রবীভূত হয় এবং পরে রক্তে মিশে গিয়ে শরীরে পাকাপাকি ঘাঁটি গাড়তে পারে। বিশেষ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চুইংগাম চিবোলে শরীরে এই ক্ষতিকারক উপাদানগুলির মাত্রা আরও বেড়ে যায়। যা শরীরের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। একাধিক মারাত্মক রোগের প্রকোপ দিতে পারে। ক্যানসারের মতো মারণ রোগের ঝুঁকিও অনেকাংশে বেড়ে যায়।
প্লাস্টিকের কণাগুলি শরীরে প্রবেশ করে অন্ত্রে জমা হতে পারে এবং পরিপাকতন্ত্রকে প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়াও মাইক্রোপ্লাস্টিকে উপস্থিত রাসায়নিক শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। শরীরে প্লাস্টিক প্রবেশ করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষকদের দাবি, কোষ ও ডিনএনএ-র ক্ষতি করে ক্যানসার সহ একাধিক গুরুতর রোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।
গবেষকরা বলছেন, চুইং গামের মধ্যে থাকা কৃত্রিম মিষ্টিকারক যেমন অ্যাসপারটেম বা অ্যাসেসালফেম সরাসরি আপনার হজমতন্ত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে গ্যাস, অম্লতা বা হজমের সমস্যা তৈরি হতে পারে। শুধু তাই নয়, এই মিষ্টিকারকগুলো মেজাজ ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে এবং মস্তিষ্কের ভারসাম্যকে বিঘ্নিত করতে পারে।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, চুইংগামের ভিত্তি বেশিরভাগ সময়ে প্লাস্টিক জাতীয় সিন্থেটিক পলিমার দিয়ে তৈরি। প্রতিবার চিবানোর সময় মুখের মধ্যে এই প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা প্রবেশ করে। যা হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, থাইরয়েডের কার্যকারিতা প্রভাবিত করতে পারে এবং ইস্ট্রোজেনের মাত্রা হঠাৎ পরিবর্তন করে। বিশেষ করে মেনোপজের সময়ে হঠাৎ রাগ, বিরক্তি বা ঘুমের সমস্যা আরও তীব্র হতে পারে।
