এক সময় মনে করা হত যে, হার্ট অ্যাটাকের মতো গুরুতর সমস্যা শুধুমাত্র মধ্যবয়সী বা তার চেয়েও বেশি বয়সীদের মধ্যে ঘটে। কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, হার্ট অ্যাটাক এখন আরও তরুণদের মধ্যেও ঘটছে। এমনকি ২০ এবং ৩০-এর মানুষদের মধ্যেও। সিনিয়র কার্ডিয়োলজিস্ট ডঃ এম. শ্রীনিবাস রাও সতর্ক করে বলেছেন যে, অনেক তরুণ গুরুতর হৃদরোগের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
ডঃ রাও বলছেন, হৃদরোগের এই বৃদ্ধি মূলত খারাপ জীবনধারার ফল। তিনি জানান, অনেকগুলি অভ্যাসের সঙ্গে জেনেটিক প্রভাবও মিলিত হয়ে তরুণদের মধ্যে কার্ডিয়াক সমস্যার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, “দীর্ঘ কাজের সময়, মানসিক চাপ, অনিয়মিত ঘুম, ফাস্ট ফুডের অভ্যাস, অচিহ্নিত উচ্চ রক্তচাপ, বৃদ্ধি পাওয়া কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস এবং পরিবারের হৃদরোগের ইতিহাস। এমনকি দৈনন্দিন দূষণের সংস্পর্শ বা মাঝে মাঝে ধূমপানও ধীরে ধীরে ধমনী ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।”
আরেকটি প্রচলিত ভুল ধারণা হল, খারাপ স্বাস্থ্যের প্রভাব চেহারায়ও দেখা যাবে। কিন্তু বাস্তবে সবসময় তা হয় না। কাউকে বাইরে থেকে সুস্থ মনে হলেও ভিতরে ক্ষতি ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। ডঃ রাও সতর্ক করেছেন, “একজন তরুণকে বাইরে থেকে ফিট দেখাতে পারে, কিন্তু তাদের রক্তনালীগুলোর ভিতরে হয়তো ইতিমধ্যেই প্রাথমিক প্ল্যাক তৈরি হতে শুরু করেছে।”
এই কারণেই হার্টের যত্নকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সিরা প্রায়শই ত্বকের যত্ন, রেটিনল দিয়ে ফাইন লাইন কমানো ইত্যাদিতে বেশি মনোযোগ দেন, যা অবশ্যই করা উচিত, তবে হৃদরোগের মতো বিষয়গুলিতেও নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এগুলিকে আগে মধ্যবয়সে চিন্তার বিষয় মনে হলেও এখন সেই পরিস্থিতি বদলেছে।
শুরুর থেকেই জীবনধারা বদলানো প্রয়োজন। এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলোকে মাঝে মাঝে নয়, বরং রোজকার জীবনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা জরুরি। হার্টকে সুস্থ রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হল সক্রিয় থাকা। ছোট ছোট নানা উপায়ে যেমন লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করা, রোজ অল্প সময়ের জন্য হলেও হাঁটা। চিকিৎসক বলেন, “ব্যায়ামকে সপ্তাহান্তের জিম সেশনের বদলে প্রতিদিন হার্টের জন্য একটি ওয়ার্কআউট হিসাবে বিবেচনা করুন।”
খাওয়াদাওয়ার দিকে নজর দিতে হবে। সবজির মধ্যে পালং শাক, ব্রকলি, গাজর. ফলের মধ্যে বেরি, কমলা; শস্যের মধ্যে ওটস, ব্রাউন রাইস, এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যেমন বাদাম, বীজ, অলিভ অয়েল বা অ্যাভোকাডো, এসবই প্রতিদিনের খাবারের মূল অংশ হওয়া উচিত। ফাস্ট ফুড, চিনিযুক্ত পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং অতিরিক্ত নুনকে দৈনন্দিন খাবারের পরিবর্তে মাঝে মাঝে উপভোগ্য হিসাবে রাখা উচিত।
সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট দ্রুত হাঁটা, সাইক্লিং বা সাঁতার করার লক্ষ্য রাখুন এবং দু’টি স্টেংথ ট্রেনিং সেশন করার চেষ্টা করুন। দিনে ছোট ছোট শারীরিক ক্রিয়াকলাপও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন সিঁড়ি ব্যবহার করা, সহকর্মীর ডেস্ক পর্যন্ত হাঁটা, বা সন্ধ্যায় দ্রুত হাঁটা বা জগিং। এসব মিলিয়ে মোট শারীরিক সক্রিয়তা বাড়ানো যায়।
রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, রক্তে শর্করা, শরীরের ওজন এবং কোমরের মাপ চেক করবেন।
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ ধমনীতে রক্তচাপ এবং প্রদাহ বাড়ায়। যোগব্যায়াম, সংক্ষিপ্ত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, অথবা দিনের মধ্যে ১০ মিনিটের ফোন-মুক্ত হাঁটার মতো কিছু কৌশল সাহায্য করতে পারে। চাপ নিয়ন্ত্রণকে যে কোনও ডায়েট বা ব্যায়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা উচিত।
অতিরিক্ত মদ্যপান হৃদযন্ত্রকে চাপ দেয় এবং অস্বাভাবিক রিদম সৃষ্টি করতে পারে।
তামাক ধমনীকে দ্রুত ক্ষয় করে এবং রক্ত জমাট বাধার ঝুঁকি বাড়ায়।
