আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিনে আয় ২৫০০ টাকা, ৭.৫ কোটির মালিক! ভিক্ষা করেই কোটিপতি, মুম্বইয়ের এই ব্যক্তির জীবন যেন সিনেমা।
পরনে অতি সাধারণ মলিন পোশাক, এলেমেলো চুল। মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাস বা আজাদ ময়দানের জনবহুল রাস্তায় তাঁকে দেখা যায় মাঝেমধ্যে। বেশ দেখে আর পাঁচজন ভিক্ষুকের থেকে আলাদা করার উপায় নেই। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে যা দেখা যায়, তার আড়ালেই লুকিয়ে রয়েছে এক অবিশ্বাস্য সত্যি যা জানতে পারলে হতচকিত হয়ে যেতে হয়। ভিক্ষুকের না ভরত জৈন। তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ভিক্ষুক বললেও অত্যুক্তি হয় না।

আরও পড়ুন: ‘ধরবে নাকি?’ পুরুষাঙ্গ দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দেন প্রযোজক! টাকার বিনিময়ে সঙ্গমও করেন কামসূত্রের নায়িকা?
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত বীর্যপাতে মৃত্যু! শুক্রাণু দান করার নেশায় ডাক্তারি পড়ুয়ার করুণ পরিণতি জানলে চোখে জল আসবে

মুম্বই মানেই বলিউড, সিনেমা, শাহরুখ-সলমনের গল্প। অনেকেই একে ভারতের স্বপ্ননগরী বলেন। কারণ অনেকেই শূন্য হাতে এসে গোটা দেশের নয়নের মণি হয়ে উঠেছেন এই শহরে এসে। ৫৪ বছর বয়সী ভরতের জীবনও কোনও বলিউডি সিনেমার চিত্রনাট্যের চেয়ে কম নয়। প্রায় চার দশক ধরে মুম্বইয়ের রাস্তায় ভিক্ষা করেই তিনি যে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন, তা শুনলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৭.৫ কোটি টাকা! প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত প্রায় ১০-১২ ঘণ্টা ‘কাজ’ করে তাঁর দৈনিক আয় ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
আশ্চর্যের এখানেই শেষ নয়। মধ্য মুম্বইয়ের পারেল এলাকায় একটি বিলাসবহুল আবাসনে তাঁর নিজের একটি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট রয়েছে, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১.২ কোটি টাকা। সেখানেই স্ত্রী, দুই ছেলে, ভাই এবং বাবাকে নিয়ে তাঁর ভরা সংসার। এখানেই শেষ নয়, থানেতে তাঁর দু’টি দোকানও রয়েছে। সেই দোকান ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে অনায়াসে ৩০,০০০ টাকা পকেটে ঢোকে তাঁর।
ভরতের সন্তানেরা কনভেন্ট স্কুলে পড়াশোনা শেষ করেছেন। পরিবারের অন্য সদস্যরা একটি স্টেশনারি দোকান চালান। স্বাভাবিকভাবেই, বাড়ির লোকজনের তাঁর এই পেশায় ঘোর আপত্তি। কোটি টাকার সম্পত্তি থাকতেও কেন ভিক্ষাবৃত্তি? কিন্তু পরিবারের সদস্যরা বারবার বারণ করা সত্ত্বেও ভরত নিজের সিদ্ধান্তে অটল। তাঁর সাফ কথা, টাকার জন্য নয়, মনের শান্তির জন্য ভিক্ষা করেন তিনি। তাঁর দাবি, তিনি লোভী নন এবং নিয়মিত মন্দির ও দাতব্য সংস্থায় দানও করেন।ভারতে ভিক্ষাবৃত্তি আইনত নিষিদ্ধ হলেও শুধুমাত্র সহানুভূতির উপর ভর করে এই পেশা আজও টিকে রয়েছে। নেপথ্যে রয়েছে আর্থিক অসাম্য এবং চরম দারিদ্র। বিশেষত, উত্তর প্রদেশ, বিহার মধ্যপ্রদেশের মতো গো বলয়ের রাজ্যে দারিদ্র্য এখনও আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে তুলনীয়। দিল্লিতে তো অবস্থা এতই শোচনীয় যে জি-২০ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় কেন্দ্রীয় সরকার জোর করে ভিখারী তাড়ানোর কর্মসূচি নেয়। অথচ অন্যদিকে সেই ব্যবস্থারই এক আশ্চর্য ফসল ভরত জৈন। পরিবারের স্বচ্ছলতা, কোটি টাকার সম্পত্তি, সবই আছে। তবুও রাস্তায় হাত পাতা ছাড়তে নারাজ তিনি।
মায়ানগরীর এই ‘কোটিপতি ভিক্ষুক’ যেন এক জীবন্ত বিস্ময়, যিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন, বাইরের চেহারাটা আসলে কতটা বিভ্রান্তিকর হতে পারে! এই জন্যই বলে, “মলাট দেখে কখনও বইয়ের বিচার করতে নেই।”