ওজন কমাতে আগ্রহী মানুষদের মধ্যে আজকাল চিয়া সিড বেশ জনপ্রিয়। মাত্র কয়েক গ্রাম এই বীজে থাকে প্রচুর ফাইবার, প্রোটিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড-এমন তথ্য সামনে আসতেই এটি স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের ডায়েটের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু ওজন কমাতে সর্বোপরি সার্বিক সুস্থতার জন্য এই বীজ কীভাবে কাজ করে? কোন সময়ে খেলে সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া যায়? আর ভুলভাবে খেলেই বা কী ধরনের বিপদ ঘটতে পারে-এই সব প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, চিয়া সিডসের সবচেয়ে বড় শক্তি হল এর ফাইবার। জলে ভিজিয়ে রাখলে বীজগুলো ফুলে জেলির মতো আকার নেয়, যা পাকস্থলীতে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরে রাখে। এর ফলে ঘন ঘন খিদে পায় না, অকারণে কিছু খাওয়ার প্রবণতাও কমে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান তাদের জন্য এই ‘ফুলে ওঠা’ বৈশিষ্ট্যটি অত্যন্ত কার্যকর। পাশাপাশি চিয়া সিড শরীরে শক্তির মাত্রা স্থির রাখতে সাহায্য করে এবং রক্তে সুগারের নিয়ন্ত্রণে রাখে—যা ডায়েট অনুসরণ করতে আরও সহায়ক।

পুষ্টিবিদরা বলছেন, চিয়া সিড খাওয়ার সবচেয়ে ভাল সময় হল সকালে ব্রেকফাস্টের আগে বা খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে। এতে শরীর দ্রুত পেট ভরার অনুভূতি পায় এবং দিনের মোট ক্যালোরি গ্রহণও কমে আসে। দই, ওটমিল, স্যালাড, স্মুদি বা চিয়া ওয়াটারে মিশিয়ে চিয়া সিড বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। তবে দৈনিক ১–২ টেবিল চামচের বেশি নেওয়া ঠিক নয়। কারণ অতিরিক্ত ফাইবার হজমজনিত সমস্যা তৈরি করতে পারে।

এছাড়া অনেকে ভুল করে চিয়া সিড শুকনো অবস্থায় খেয়ে থাকেন, যা মুখের ভেতর ভিজে দ্রুত ফুলে গিয়ে গলার অংশে আটকে যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এই সমস্যা এতটাই মারাত্মক হয়েছে যে মানুষকে হাসপাতালে পর্যন্ত যেতে হয়েছে। তাই অবশ্যই সিড ভিজিয়ে বা তরলে মিশিয়ে নেওয়াই নিরাপদ। এছাড়া চিয়া সিড খাওয়ার সঙ্গে জল কম খেলে পেট ফাঁপা, গ্যাস বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে বা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান তাদের চিয়া সিডস নিয়মিত খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ নেওয়া জরুরি। 

মনে রাখবেন, চিয়া সিড নিঃসন্দেহে ওজন কমানোর পথে একটি কার্যকর সঙ্গী, তবে এটি কোনও ম্যাজিক নয়। সঠিক নিয়ম, নির্দিষ্ট পরিমাণ ও পর্যাপ্ত জল—এই তিনটি বিষয় মানলেই পাবেন সবচেয়ে বেশি উপকার। সুষম খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শরীরচর্চার সঙ্গে মিলিয়ে নিলে চিয়া সিড স্বাস্থ্যকর ওজন কমানোর যাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।