আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিয়ের সঠিক সময় কোনটা? কারও মতে যত তাড়াতাড়ি করবেন তত ভাল, কেউ কেউ আবার মনে করেন, জীবনে মানসিক এবং অর্থনৈতিক স্থিতি আসুক আগে, তারপর বিয়ে। কিন্তু বিষয়টি কি সত্যিই নিছক ব্যক্তিগত ইচ্ছা অনিচ্ছার? এবার এই বিষয়েই নতুন দিশা দেখাল বিজ্ঞান। সম্প্রতি এক মার্কিন সমাজতাত্ত্বিকের গবেষণায় উঠে এসেছে এক চমকপ্রদ তথ্য। কোন বয়সে বিয়ে করছেন তাই নাকি ঠিক করে দিতে পারে আপনার বিবাহবিচ্ছেদের ঝুঁকি কতটা!
আমেরিকার ইউটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ববিদ নিকোলাস এইচ. ওলফিঙ্গার ২০০৬-২০১৩ সালের মধ্যে ‘ন্যাশনাল সার্ভে অফ ফ্যামিলি গ্রোথ’ থেকে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে এক অদ্ভুত তত্ত্বে পৌঁছেছেন। তাঁর দাবি, পরিসংখ্যান অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট বয়সে বিয়ে করলে দাম্পত্যের স্থায়িত্ব সর্বাধিক হয়। ২০০৬ থেকে ২০১০ এবং ২০১১ থেকে ২০১৩, এই দুই সময়পর্বের তথ্য বিশ্লেষণ করেন তিনি। এবং সেই বিশ্লেষণে বেরিয়ে এসেছে ইংরেজি অক্ষর ইউ-এর মতো আকৃতির একটি গ্রাফ।
আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
এই ইউ-এর মতো গ্রাফটি কী? গবেষণা অনুযায়ী, যেসব দম্পতি ২৮ থেকে ৩২ বছর বয়সের মধ্যে বিয়ে করেন, তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদের সম্ভাবনা সবচেয়ে কম। অর্থাৎ বিবাহবিচ্ছেদের আশঙ্কার নিরিখে এই বয়স সবার নিচে। এর থেকে আগে বিয়ে করলেও গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হবে আবার এর পরে বিয়ে করলেও গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হবে। এবার ভেবে দেখুন সেই গ্রাফ ইউ আকৃতির হল কি না।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০-র কোঠার শুরু থেকে ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত এক বছর করে এগোতে থাকলে বিবাহবিচ্ছেদের ঝুঁকি বছর প্রতি গড়ে ১১% হারে কমতে থাকে। গবেষকের মতে, এই বয়সকালই হল বিয়ের ‘সুইট স্পট’। কারণ এই সময়েই একদিকে মানসিক পরিণতি আসে, অন্যদিকে সম্পর্ক নিয়েও যথেষ্ট পরিপক্ব দৃষ্টিভঙ্গি থাকে।
আরও পড়ুন: ৮৫ বছর বয়সে মাধ্যমিকে বসেও ফের অকৃতকার্য! ইনিই পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক স্কুলছাত্র
তবে আশ্চর্যজনক ভাবে, ৩২-এর পর থেকেই সেই ধারা উল্টো দিকে ঘুরে যায়। ৩২ বছরের পরে যত বিয়ে পিছোয়, তত বছর প্রতি গড়ে ৫% হারে বিবাহবিচ্ছেদের সম্ভাবনা বাড়ে। অর্থাৎ, খুব দেরিতে বিয়ে করাও কিন্তু সুখী দাম্পত্যের পক্ষে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এর কারণ কী? ওলফিঙ্গারের মতে, এটি ‘সিলেকশন ইফেক্ট’ হতে পারে। দেরিতে বিয়ে করার প্রবণতা যাঁদের মধ্যে দেখা যায়, তাঁদের ব্যক্তিগত জীবন, সম্পর্কের ধরন বা মানসিক প্রস্তুতিতে এমন কিছু থাকতে পারে যা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় দীর্ঘদিন একা থাকার অভ্যাস, অতিরিক্ত আত্মনির্ভরতা কিংবা অতীতের ব্যর্থ সম্পর্কও ভবিষ্যতের দাম্পত্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
সব মিলিয়ে, গবেষণা অনুযায়ী খুব কম বয়সে বিয়ে করাও যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনই বেশি দেরি করাও বিপজ্জনক। বরং ২৮ থেকে ৩২ বছরের মধ্যবর্তী সময়টাই বিবাহের পক্ষে সবচেয়ে নিরাপদ। পরিসংখ্যানগত ভাবে অন্তত সেটাই সত্যি। তবে গবেষক এও জানিয়েছেন, গবেষণা এমনটা দেখা গিয়েছে মানেই এই না যে সবাইকেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিয়ে করতেই হবে। জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে মানসিক প্রস্তুতি, পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সম্পর্কের গভীরতা যে কোনও পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।