আজকাল ওয়েবডেস্ক: নারকেলডাঙায় থানা এলাকায় পণলোভী স্বজনদের নির্যাতনে এক নববধূর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার সত্যতা প্রকাশ্যে এল। নববধূ খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার স্বামী ও ননদ মৃতার নাম, নায়না কুমারী ওরফে রাখি সিং। বয়স ছিল প্রায় ২৪ বছর। ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী সঞ্জয় সিং এবং ননদ রেখা পোয়াল-কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

 

সূত্রের খবর, নায়না কুমারীর বিয়ে হয়েছিল ২৬ অক্টোবর ২০২৩ সালে। মৃতার দাদা বিহারের নওয়াদা জেলার ওয়ারিসালিগঞ্জের বাসিন্দা অভিযোগকারী মনীশ কুমার সিং জানান, বিয়ের পর থেকেই নায়নার স্বামী সঞ্জয় সিং, শ্বশুর রাম বিক্ষ সিং, ভাসুর অজয় সিং, ননদ রেখা পোয়াল এবং শাশুড়ি মিলে তাঁকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতেন। ক্রমাগত আরও বেশি পণের দাবি করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। 

 

অভিযোগ অনুযায়ী, এই নির্যাতনের পরিণতিতেই গত ২৯ আগস্ট তাঁকে ইচ্ছাকৃতভাবে গলা টিপে খুন করা হয়। পরদিন, ৩০ আগস্ট, মৃতার দেহ IDBG হাসপাতাল থেকে উদ্ধার হয় এবং তখন একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা নথিভুক্ত করা হয়। 

 

আরও পড়ুন: কলকাতার দুই সরকারি বিদ্যালয়ে সাফল্যের মুকুট, বিশ্ব মঞ্চে বাংলার নাম উজ্জ্বল করল যাদবপুরের দুই স্কুল

 

গত ৩১ আগস্ট NRSMCH মরচুয়ারিতে মৃতার ইনকোয়েস্ট ও ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে ১৫ অক্টোবর পাওয়া ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে — মৃত্যুর কারণ গলায় চেপে ধরা-র প্রভাবে। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর, ১৭ অক্টোবর মৃতার দাদা মনীশ কুমার সিং নারকেলডাঙা থানায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে নারকেলডাঙা থানায় মামলা নং ৪৭০/২০২৫ রুজু হয়। ধারা ৮৫/৮০/১০৩(১)/৩(৫) ভারতীয় দণ্ডবিধি (BNS) ও গৃহনির্যাতন প্রতিরোধ আইন (DP Act)-এর অধীনে। 

 

তদন্তে নেমে পুলিশ ইতিমধ্যেই স্বামী সঞ্জয় সিং এবং ননদ রেখা পোয়ালকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যান্য অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক তদন্তে এটি নিছক আত্মহত্যা নয়, বরং সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের ইঙ্গিত মিলেছে। তদন্তকারীরা এখন মৃতার শ্বশুরবাড়ির অন্যান্য সদস্যদের ভূমিকা খতিয়ে দেখছেন।

 

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, 'তদন্ত এখনও চলছে। ঘটনাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। খতিয়ে দেখা হচ্ছে এর পেছনে আরও কেউ যুক্ত আছে কিনা। প্রাপ্ত প্রমাণ ও সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আরও যদি কোনও অভিযুক্ত থাকে তাহলে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।' 

 

স্থানীয় মহলে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে এই পণজনিত হত্যার ঘটনায়। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, 'নায়না শান্ত, হাসিখুশি মেয়ে ছিল। ওর এই পরিণতি আমরা কেউই ভাবিনি।' 

পণ লোভের বলি নায়না কুমারীর মৃত্যুর ঘটনায় ফের একবার প্রশ্ন উঠেছে সমাজের সেই পুরনো দুঃসহ বাস্তবতা নিয়ে, যেখানে ভালবাসা, সম্পর্ক আর মর্যাদার জায়গা দখল করছে অর্থ ও লোভ।