আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্ব আইভিএফ দিবসের প্রাক্কালে, Genome – The Fertility Centre (Ambuja Neotia Healthcare Venture Limited-এর একটি ইউনিট) উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছিল একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের। যেখানে জেনেটিক্স বা বংশগতির ভূমিকাকে কেন্দ্র করে আলোচিত হয় কীভাবে আইভিএফ বন্ধ্যাত্ব নির্ণয়ে সহায়তা করতে এবং প্রমাণভিত্তিক প্রজনন সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন Genome-এর ডা. সুজয় দাসগুপ্ত, ডিরেক্টর– ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস এবং ডা. এমিলি ব্যানার্জি, মেডিক্যাল কনসালট্যান্ট। তাঁরা জানিয়েছেন, এখন সময় এসেছে ফার্টিলিটি অ্যাসেসমেন্ট বা বন্ধ্যাত্ব নিরীক্ষণের নিয়মিত প্রক্রিয়ায় জেনেটিক স্ক্রিনিং যুক্ত করার। বিশেষ করে, যেসব ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের কোনও স্পষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না অথবা যারা বারবার আইভিএফে ব্যর্থ হচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই জেনেটিক মূল্যায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অনেকে বাহ্যিকভাবে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এবং প্রথাগত পরীক্ষাগুলিতে (যেমন ক্যারিওটাইপিং) কোনও সমস্যা ধরা না পড়লেও, তবুও তাঁরা Recurrent Pregnancy Loss (RPL) বা Repeated Implantation Failure (RIF)-এর শিকার হন। এর নেপথ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে সূক্ষ্ম জেনেটিক ত্রুটি যেমন, অতিরিক্ত বা অনুপস্থিত ক্রোমোজোম সেগমেন্ট অথবা একক-জিন সংক্রান্ত বংশগত রোগ। যা সাধারণ পরীক্ষায় ধরা পড়ে না। এই ধরনের গোপন জেনেটিক সমস্যা আইভিএফ-এর ফলাফল খারাপ করে তোলে এবং দম্পতির উপর মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়।এই জন্য Pre-implantation Genetic Testing (PGT), Carrier Screening ও Prenatal Diagnosis-কে চিকিৎসার সম্পূরক নয়, বরং আবশ্যিক উপাদান হিসেবে গণ্য করার আহ্বান জানান বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন, যে দম্পতিরা একাধিকবার আইভিএফে ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে জেনেটিক টেস্টিং কতটা প্রয়োজনীয়। যেসব মহিলারা বারবার গর্ভপাতের শিকার হচ্ছেন কিন্তু কোনও নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাঁদের জন্য জেনেটিক মূল্যায়ন উপকারী। যেসব পরিবারে বংশগত রোগ বা অজ্ঞাত কারণে শিশুমৃত্যুর ইতিহাস রয়েছে, তাঁদের জন্য স্ক্রিনিংয়ের পরামর্শ। অজানা জন্মগত ত্রুটি বিশ্লেষণে পূর্ণাঙ্গ জেনেটিক অ্যাসেসমেন্টের প্রয়োজনীয়তা। পুরুষদের ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের অন্তর্নিহিত জেনেটিক কারণ অন্বেষণ। থ্যালাসেমিয়া ও স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (SMA)-এর মতো রোগে ক্যারিয়ার হিসেবে চিহ্নিত দম্পতিদের জন্য নির্দিষ্ট জেনেটিক কাউন্সেলিং ও স্ক্রিনিং।
এ দিন কেস স্টাডির মাধ্যমে দেখানো হয় কিভাবে PGT-এর মাধ্যমে পূর্বে অজানা ক্রোমোজোমাল ত্রুটির মধ্যেও সুস্থ ভ্রূণ বাছাই করে সফল গর্ভধারণ সম্ভব হয়েছে। Non-invasive PGT-এর সূচনা– যেখানে ভ্রূণের biopsy ছাড়াই blastocyst fluid ব্যবহার করে জেনেটিক টেস্টিং সম্ভব। এছাড়াও, গর্ভধারণের প্রাথমিক পর্যায়ে Non-Invasive Prenatal Testing (NIPT) ও ১২–১৩ সপ্তাহের মধ্যে First Trimester Screening-এর গুরুত্ব আলোচিত হয় – যা ডাউন সিনড্রোমের মতো জটিল সমস্যার আগেভাগে শনাক্তে সহায়তা করে।
ডা. সুজয় দাস গুপ্ত বলেন, “যদিও আইভিএফ বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে, তবে বারবার ভ্রূণ রোপণে ব্যর্থতা বা পুনরাবৃত্ত গর্ভপাতের পেছনে অনেক সময় জেনেটিক কারণ থেকে যায় যা সাধারণ টেস্টে ধরা পড়ে না। আমাদের উদ্যোগ #DecodeInfertilityWithGenetics-এ আমরা দেখাতে চেয়েছি যে জেনেটিক স্ক্রিনিং, PGT ও ক্যারিয়ার স্ক্রিনিং আজকের দিনে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ, এগুলিই বহু সুপ্ত বংশগত রোগ ও ক্রোমোজোমাল ত্রুটি আগে থেকেই শনাক্ত করতে সক্ষম। এর ফলে রোগ নির্ণয় আরও নিখুঁত হয় এবং দম্পতিরা নিজেদের জন্য চিকিৎসা পরিকল্পনা নিতে পারেন। এতে সফল ও সুস্থ গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।”
ডা. এমিলি ব্যানার্জি বলেন, “একজন জেনেটিক কাউন্সেলর হিসেবে আমি বহু দম্পতির ক্ষেত্রে দেখেছি সব রিপোর্ট স্বাভাবিক হলেও গর্ভপাত বারবার ঘটছে। জেনেটিক স্ক্রিনিং এই ফাঁকটা পূরণ করে। যেমন, এক দম্পতি যাঁরা বহুবার অকারণে গর্ভপাতের শিকার হয়েছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে PGT করে একটি ক্রোমোজোমালি স্বাভাবিক ভ্রূণ শনাক্ত করা হয়। সেই ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের পর গর্ভধারণ সফল হয় এবং একটি সুস্থ শিশুর জন্ম হয়। এই ধরনের অভিজ্ঞতা দেখায়, জেনেটিক স্ক্রিনিং শুধু চিকিৎসার গতি বদলায় না, বরং মানসিক শান্তি, সময় ও অর্থ– সব কিছুর ক্ষেত্রেই ফলদায়ক। এটি আজ আর বিলাসিতা নয়– বরং আধুনিক ফার্টিলিটি চিকিৎসার মৌলিক উপাদান।”
বর্তমান সময়ে জেনেটিক প্রযুক্তি দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় জেনেটিক মূল্যায়নের অন্তর্ভুক্তি অত্যাবশ্যক – বিশেষ করে যেসব ক্ষেত্রে সমস্যার কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। Genome – The Fertility Centre প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ব্যক্তিকৃত ও জেনেটিকভাবে সমৃদ্ধ প্রজনন সেবার জন্য। তারা চায়, প্রতিটি পরিবার যেন জেনেটিক সচেতনতা অর্জন করে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজেদের প্রজনন যাত্রায় সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বন্ধ্যাত্ব সমস্যায় ভোগা বহু মানুষের চিকিৎসা প্রয়োজন উপলব্ধি করেন। Neotia Bhagirathi Woman and Child Care Centre (NBWCCC) ২০০৬ সালে ক্লিনিকটির প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে এই সংস্থা কলকাতায় দু’টি, বর্ধমান ও মেদিনীপুরে একাধিক সেন্টার পরিচালনা করছে এবং ভবিষ্যতে আরও সেন্টার চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
