জয়ন্ত ঘোষাল: কলকাতার মানুষ সেই কবে কবিতা থেকে মিছিলে এসেছে। তাই মিছিলের মানুষ চিনতে আমাদের ভুল হয় না। নবান্ন অভিযানে আসা তথাকথিত ছাত্রসমাজের মুখগুলি চিনতে এবারও ভুল হল না। 

 

কোথায় ছাত্র? 

 

হাতে লম্বা লম্বা রড নিয়ে অনেক ছাত্রকে দাপাদাপি করতে দেখলাম। বাবুঘাটে রেললাইন থেকে বড় বড় পাথর তুলে পুলিসকে অব্যর্থ নিশানা করে সেগুলি ছুঁড়তে দেখলাম। কোমলবৃত্তির ছাত্রদের এই হিংসাত্মক ভূমিকা কখনও দেখিনি। এ কথা ঠিক, নকশাল আন্দোলনের সময় সত্যিকারের ছাত্ররা বুক বেধেছে, আঘাত হেনেছে পুলিসের ওপর। কিন্তু সেই আন্দোলনেও স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল। 

নবান্ন অভিযান আসলে গোটা রাজ্যে এক ভয়ঙ্কর ধর্ষণ এবং হত্যার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা স্বতঃস্ফূর্ত নাগরিক সমাজের জনরোষের সমান্তরাল একটি রাজনৈতিক চিত্রনাট্য। এই রাজনৈতিক চিত্রনাট্যের রচয়িতা বিজেপি। নবান্ন অভিযানের মিছিলে সাদা শার্ট, সাদা প্যান্ট পরিহিত পরিচিত প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিংহকে দেখা গেল। অর্জুন সিংহ সেখানে কী করছিলেন? শিক্ষার অবশ্য কোনও বয়স সীমা নেই। যে কোনও বয়সেই ছাত্র হওয়া যায়। 

 

 

 মঙ্গলবার নবান্ন অভিযান শেষ হয়ে যাওয়ার পর সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছিলেন, এই আন্দোলনটা বিজেপির নয়। একটা সমাজের আন্দোলন। আসলে এই সমাজের আন্দোলন কিন্তু বিজেপি সমর্থন করছে। এই সমর্থনের মধ্যে বিজেপির একটা সাংঘাতিক রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা লুকিয়ে রয়েছে। তার কারণ, এই আর জি করের ধর্ষণের বিরুদ্ধে মিছিল এবং অবস্থান, তার চরিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। তবে এই মিছিলের চরিত্রটা কিন্তু চেনা। এই মিছিলে বিজেপির যে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচির মতোই সেই ব্যারিকেড ভাঙা, সেই পুলিসের দিকে ইঁট-পাথর-বোতল ছোঁড়া। মিছিলের পোস্টার-স্লোগান, সবকিছু সেই একইরকম বিজেপির দলীয় কর্মসূচির মতোই। আর মূল দাবিটা ছিল— মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ। সেখানে কিন্তু আর জি কর কান্ডে ন্যায় বিচারের দাবি ছিল নেহাতই গৌণ। তার ফলে এটা খুব স্পষ্ট হয়ে গেল যে, নাগরিক সমাজের আন্দোলন বলে চালাতে গিয়ে আসলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে বিজেপি উদগ্রীব। 

 

মমতা ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবথেকে কঠিনতম সময়ের মধ্যে বসবাস করছেন— এটা নিশ্চয়ই স্বীকার্য। কিন্তু এখনই রাজনৈতিক পালাবদলের সম্ভাবনাকে চাগিয়ে দেওয়ার জন্য সর্বশক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে বিজেপি আক্রমণাত্মক হচ্ছে। তাতে কিন্তু মূল সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। উল্টে রাজনৈতিক নৈরাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে।