আজকাল ওয়েবডেস্ক: নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র হিসেবে জোহরান মামদানির বিজয় শুধু একটি রাজনৈতিক সাফল্য নয়—এটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী, ইসলামবিদ্বেষী ও আর্থিক দমননীতির এক তীব্র প্রত্যাখ্যান। কিন্তু এই ভূমিকম্পসদৃশ পরিবর্তনের অন্তরে লুকিয়ে আছে এক নতুন প্রজন্মের—জেনারেশন জি-র এক ভিন্নধর্মী বিপ্লব।


সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ, নেপাল ও মাদাগাস্কারে দেখা গেছে জেন জেড নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের জোয়ার—যেগুলো ছিল নেতৃত্বহীন, স্বতঃস্ফূর্ত ডিজিটাল বিস্ফোরণ এবং তাত্ক্ষণিক জবাবদিহিতার দাবিতে ক্ষুব্ধ তরুণদের রাস্তায় নেমে আসা। কিন্তু মামদানির প্রচারাভিযান তার সম্পূর্ণ বিপরীত এক মডেল। এটি ছিল এক নীরব কিন্তু কাঠামোগত বিদ্রোহ—এক প্রজন্মের যা বিভাজনে ক্লান্ত, এবং খুঁজছিল সম্প্রদায়, উদ্দেশ্য ও প্রগতিশীল শাসনের ভিত্তি।


এই আন্দোলন ছিল দীর্ঘমেয়াদি এক যাত্রা—যেখানে অংশ নিয়েছিল তরুণ স্বেচ্ছাসেবীরা, ক্ষুদ্র অনুদানদাতারা, এবং ডিজিটাল সংগঠনের শক্তি। প্রচারণা শুধু ভোটের লড়াই নয়, এক সম্প্রদায় গঠনের প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা হয়েছে। 


মামদানির প্রচার তরুণ ভোটারদের কাছে আবেদন করেছে কারণ এটি প্রচলিত রাজনীতির প্রতি ক্ষোভের পাশাপাশি বাস্তবসম্মত সমাধান উপস্থাপন করেছে—বাসস্থানের খরচ, কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা। ট্রাম্পের বিভাজনমূলক, ভয়প্রচারক রাজনীতির বিপরীতে মামদানির অবস্থান ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক ও সহানুভূতিশীল শাসনের পক্ষে।


২০২৪ সালের শেষ দিকে যখন তিনি প্রচার শুরু করেন, তখন জনমত সমীক্ষায় তার সমর্থন ছিল এক অঙ্কে। কিন্তু ছোট দানের অর্থ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও হাজারো তরুণ স্বেচ্ছাসেবীর হাত ধরে মামদানি তৈরি করেন এক বৈচিত্র্যময় জোট—প্রগতিশীল এলিট, দক্ষিণ এশীয় ও জেন জেড ভোটারদের মিলিত এক শক্তি।


এর ফলে দুটি বড় পরিবর্তন আসে। প্রথমত, তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বেড়ে যায়—প্রচারণার সভা ও ক্যানভাসিং শিফটগুলো হয়ে ওঠে পোস্ট-প্যান্ডেমিক প্রজন্মের জন্য এক সামাজিক আশ্রয়। দ্বিতীয়ত, ভোটদানে রেকর্ড বৃদ্ধি ঘটে। ৩৫ বছরের নিচের ভোটারদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়ে নির্বাচনের গড় বয়স নেমে আসে। মামদানি ৫০ শতাংশেরও বেশি ভোট পান—১৯৬৯ সালের পর সর্বাধিক ২০ লক্ষের বেশি ভোট পড়ে, যার মধ্যে প্রায় ৭.৩৫ লক্ষ ছিল আগাম ভোট, অধিকাংশই তরুণ ও প্রথমবারের ভোটার।


জোহরান মামদানি হলেন নিউ ইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র, এবং মার্কিন ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি প্রকাশ্যে ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট পরিচয়ে নির্বাচিত হলেন। দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত ও উগান্ডায় জন্ম নেওয়া মামদানির বিজয় অভিবাসী প্রজন্মের এক নতুন অধ্যায়। 


ট্রাম্পের প্রার্থী প্রাথমিক পর্যায়েই প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ান, ফলে নির্বাচন পরিণত হয় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আত্মার লড়াইয়ে। মামদানির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন অ্যান্ড্রু কুওমো—প্রাক্তন গভর্নরের পুত্র, যিনি যৌন হয়রানির অভিযোগে পদত্যাগের পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়েন। কিন্তু বার্নি স্যান্ডার্সের সমর্থনপুষ্ট মামদানির কাছে পরাজিত হন তিনি।


এই বিজয় শুধু নিউ ইয়র্ক নয়, গোটা আমেরিকান রাজনীতিতে এক বাঁক চিহ্নিত করেছে—যেখানে ট্রাম্পের ঘৃণানির্ভর রাজনীতির বিপরীতে জেন জেড প্রজন্ম আশা, সংযোগ ও সহমর্মিতার এক নতুন পথ দেখিয়েছে।