আজকাল ওয়েবডেস্ক: দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে বাংলাদেশে ফিরে প্রথম প্রকাশ্য কর্মসূচিতে অংশ নিলেন খালেদা জিয়ার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে অবস্থিত ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করেন। বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানানো হয়, সকালে তিনি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে রওনা হন।

এরই মধ্যে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আগামীকাল অনুষ্ঠিত কমিশন বৈঠকে তারেক রহমান ও তাঁর কন্যা জাইমা রহমানের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।  সচিব আখতার আহমেদের তাদের এই  তথ্য জানিয়েছে বলে জানাচ্ছে ডেইলি স্টার। একই দিনে তারেক রহমান ও জাইমা রহমান নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে গিয়ে ভোটার হিসেবে নাম তোলার  আবেদন করেন। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ১২ ফেব্রুয়ারির নির্ধারিত গণভোটকে সামনে রেখেই এই উদ্যোগ।

লন্ডনে দীর্ঘ প্রবাসজীবন শেষে তারেক রহমানের দেশে ফেরা ঘিরে ঢাকার রাজপথে দলীয় নেতাকর্মীদের ব্যাপক সমাবেশ ও উচ্ছ্বাস দেখা যায়। গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে পৌঁছান তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমান। রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তারেক রহমান, তবে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া লন্ডন-ঢাকা যাত্রার ছবি ও দৃশ্যের মধ্য দিয়ে নিঃশব্দে আলোচনায় উঠে আসেন জাইমা রহমানও।

সম্প্রতি এক ফেসবুক পোস্টে জাইমা রহমান লিখেছেন, “আমি কখনোই আমার শিকড়কে ভুলে যাইনি- তার যত্ন নেওয়া ও লালন করা সবসময় আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।” এই শিকড়ের টানেই তিনি বাবার সঙ্গে বাংলাদেশে ফিরেছেন বলে জানান। ওই পোস্টে তিনি তাঁর দাদু- প্রাক্তন  প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে নিজের সম্পর্কের কথা আবেগঘন ভাষায় তুলে ধরেন। তিন প্রজন্মের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের এই যোগসূত্র তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের প্রাক্কালে জনমানসে নতুন করে আলোচিত হয়।

যুক্তরাজ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যারিস্টার জাইমা রহমান দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে আইন পেশার সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁর অভিজ্ঞতা সীমিত হলেও, তরুণ সমাজের কাছে তিনি বিএনপির ‘নতুন মুখ’ হিসেবে উঠে আসতে পারেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন। বিশেষ করে এমন এক সময়ে, যখন বিএনপি অতীতের দুর্নীতি ও ‘হাওয়া ভবন’–কেন্দ্রিক ক্ষমতার বিকল্প কেন্দ্রের স্মৃতি ঝেড়ে ফেলে নতুন ভাবমূর্তি গড়ার চেষ্টা করছে।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে মাত্র ছয় বছর বয়সে ঠাকুমার  সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে গিয়েই প্রথমবার গণমাধ্যমের নজরে আসেন জাইমা রহমান। ওই নির্বাচনে বিএনপি বিপুল বিজয় অর্জন করে এবং খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন। সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্টে জাইমা তাঁর শৈশবের একটি স্মৃতির কথা উল্লেখ করেন, একটি স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট জিতে পদক হাতে ঠাকুমার  অফিসে যাওয়ার সেই মুহূর্ত, যেখানে খালেদা জিয়ার গর্বিত ও মনোযোগী উপস্থিতি তাঁকে আজও অনুপ্রাণিত করে।

২০২১ সালে আওয়ামী লীগ নেতা মুরাদ হাসানের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের পর জাইমা রহমান নতুন করে জাতীয় আলোচনায় আসেন। ওই ঘটনার জেরে মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলাও হয়।

চলতি বছরের জুলাইয়ে ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলনের পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় জাইমা রহমান ধীরে ধীরে আরও জনসমক্ষে আসতে  থাকেন। তিনি বাবার পক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন ও প্রতিনিধিত্ব করেন। ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে বিএনপি প্রতিনিধি দলের অংশ হিসেবে তিনি যোগ দেন। এছাড়া ২০২৫ সালের ২৩ নভেম্বর ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বিএনপির প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকেও অংশ নেন তিনি।

জাইমা রহমান তাঁর ফেসবুক পোস্টে বলেন, তিনি দেশের পুনর্গঠনে “সর্বোচ্চ ভূমিকা” রাখতে চান এবং স্মৃতির বাংলাদেশ নয়, বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দেশকে নতুন করে আবিষ্কার করতে চান। মানুষকে কাছ থেকে বোঝার মধ্য দিয়েই প্রকৃত রাজনীতি সম্ভব, এমন বিশ্বাস থেকেই তিনি মাঠপর্যায়ে যুক্ত হতে আগ্রহী বলে জানান। একই সঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঠাকুমার  পাশে দাঁড়ানো এবং বাবাকে সহযোগিতা করাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য।

যদিও এখনো তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা বিএনপিতে কোনও  আনুষ্ঠানিক পদ নেওয়ার ঘোষণা করেননি, তবে তাঁর ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি, বক্তব্য ও আন্তর্জাতিক সংযোগ আগামী দিনে বৃহত্তর রাজনৈতিক ভূমিকায় ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। হিংসা, মেরুকরণ ও অনিশ্চয়তায় ঘেরা নির্বাচনী মৌসুমের মুখে জাইমা রহমানের প্রত্যাবর্তন বিএনপির রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলেই ধারণা।