আজকাল ওয়েবডেস্ক: যুক্তরাজ্যে অনলাইন সেফটি অ্যাক্ট (OSA) কার্যকর হওয়ার পর অ্যাডাল্ট ওয়েবসাইটে কঠোর বয়স যাচাইকরণ নীতির কারণে পর্নহাবের ট্রাফিক ৭৭% কমে গেছে।
জুলাই মাসের তুলনায় আচমকা এই পতন রেকর্ড করেছে সংস্থাটি নিজেই। পর্নহাবের দাবি, নতুন নিয়ম না মানা ওয়েবসাইটগুলো এই পরিস্থিতিতে অন্যায়ভাবে সুবিধা পাচ্ছে।
গুগলের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্ন ওয়েবসাইট যা বিশ্বের মধ্যে ১৯তম স্থানে রয়েছে, নতুন আইন কার্যকর হওয়ার পর সেই পর্নহাবের সার্চ ভলিউম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এই তথ্য প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা বিবিসি।
OSA বা অনলাইন সেফটি অ্যাক্ট অনুযায়ী, এখন থেকে যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা কোনও ব্যক্তি যদি অ্যাডাল্ট ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে চান, তবে তাকে অবশ্যই নিজের বয়স ১৮ বছরের বেশি তা প্রমাণ করতে হবে।
সেটা ফেসিয়াল রিকগনিশন হোক বা পরিচয় যাচাইয়ের অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে। সংস্থার তরফে বলা হয়েছে, এই নতুন আইন কার্যকর হওয়ার পর যুক্তরাজ্যের ব্যবহারকারীদের অনলাইন অভ্যাসে বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
অনলাইন সেফটি অ্যাক্টের মূল উদ্দেশ্য হল ইন্টারনেটকে শিশু ও কিশোরদের জন্য নিরাপদ রাখা। আইনটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলিকে একাধিক দায়িত্ব ও নিয়ম মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে, যার বাস্তবায়ন ও তদারকি করছে দেশের মিডিয়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফকম।
অফকমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে অ্যাডাল্ট ওয়েবসাইটে মোট ভিজিট গত তিন মাসে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, এই আইনের ফলে ‘শিশুরা যাতে সহজে পর্নোগ্রাফিক কনটেন্টে না পৌঁছতে পারে’। সেই লক্ষ্য অনেকটাই পূরণ হয়েছে।
অফকম আরও জানিয়েছে, আইনের প্রয়োগের পর জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যে দৈনিক VPN ব্যবহারের সংখ্যা বেড়ে ১৫ লক্ষে পৌঁছেছিল, যদিও বর্তমানে তা কমে ১০ লক্ষের কাছাকাছি নেমে এসেছে।
সাইবারনিউজের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৫ সালে যুক্তরাজ্যে গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপল স্টোর থেকে ১ কোটি ৭ লক্ষেরও বেশি ভিপিএন অ্যাপ ডাউনলোড করেছেন ব্যবহারকারীরা।
এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. হান্নে স্টেগেম্যান বিবিসিকে বলেন, ‘অনেকেই বয়স যাচাইকরণ বা পরিচয় প্রকাশ করতে চাইছেন না — বিশেষত গোপনীয়তার কারণে। তাই তারা VPN ব্যবহার করে এই বিধিনিষেধ এড়িয়ে যাচ্ছেন। ফলে ওয়েবসাইট ভিজিটরদের অবস্থান নির্ধারণে যে তথ্য পাওয়া যায়, তা অনেক ক্ষেত্রেই ভুল হতে পারে।’
সাইবারনিউজের নিরাপত্তা গবেষক আরাস নাজারোভাস জানান, ‘বয়স যাচাইকরণ শুরু হওয়ার পরই যুক্তরাজ্যের অনলাইন অ্যাপ স্টোরগুলিতে ভিপিএন অ্যাপগুলির ডাউনলোড ১,৮০০% বেড়ে যায়। তাই পর্নহাবের ‘হারানো’ ব্রিটিশ দর্শকদের অনেকেই আসলে হারিয়ে যাননি, বরং VPN ব্যবহারের ফলে তাদের ট্রাফিক অন্য দেশ থেকে আসছে বলে দেখাচ্ছে।’
অফকমের সর্বশেষ তথ্য বলছে, যুক্তরাজ্যের ১০টি জনপ্রিয় অ্যাডাল্ট ওয়েবসাইটের সবকটিতেই বয়স যাচাই প্রক্রিয়া চালু হয়েছে, যা মোট ট্রাফিকের প্রায় এক-চতুর্থাংশের সমান। এছাড়া প্রথম ১০০টি ওয়েবসাইটের ৭৫% ট্রাফিকই এখন সেইসব সাইটে যাচ্ছে যেগুলো বয়স যাচাই কার্যকর করেছে।
সরকারের প্রতিক্রিয়ায় জানানো হয়েছে, অনলাইনে শিশুদের সুরক্ষা এখনও ‘মন্ত্রীদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয়’। সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘যদি প্রমাণ পাওয়া যায় যে শিশুদের সুরক্ষায় আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, আমরা তা করতে দ্বিধা করব না।’
