আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিবাহ অনুষ্ঠান মানেই সাধারণত আড়ম্বর ও বিপুল ব্যয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এক দম্পতি এই প্রচলনকে উল্টে দিলেন। নিজেদের বিয়েকে তারা পরিণত করলেন টিকিটযুক্ত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে, যার আয় থেকে প্রায় ১.১৬ কোটি টাকা তুলেছেন দান হিসেবে। এই অর্থ যাবে কেনিয়ার একটি স্কুল নির্মাণে।ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের আইডাহো অঙ্গরাজ্যের ঈগল শহরে এক অভিনব কাণ্ড ঘটল। পিপল ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে জানা গেছে, ৩৪ বছর বয়সী মার্লে জ্যাক এবং ৩৭ বছর বয়সী স্টিভ জে লারসন — দুই উদ্যোক্তা — গত ১ আগস্ট ঈগল শহরে আয়োজন করেছিলেন এই ব্যতিক্রমী বিবাহ অনুষ্ঠান। ব্যবসায়িক ইভেন্ট আয়োজনের অভিজ্ঞতা থাকায় তারা দেখেছেন, আমেরিকায় একটি সাধারণ বিবাহের খরচও কতটা চড়া। কেবল কেক কাটার আয়োজনের জন্যই গুনতে হয় ৬৫০ ডলার (প্রায় ৫৪ হাজার টাকা)। তাই তারা সিদ্ধান্ত নেন, প্রচলিত বিয়ের ধারা না মেনে অতিথিদের কাছ থেকে খাবারের খরচের সমান অর্থ নেওয়া হবে, এবং বিয়েটি হবে ‘স্ব-অর্থায়িত’ বা self-funded wedding।
দুই ধাপের টিকিট ব্যবস্থা
অতিথিদের জন্য ছিল দুটি ধাপের টিকিট — সাধারণ টিকিটের দাম ৫৭ ডলার (প্রায় ৪,৭৫০ টাকা), যাতে অনুষ্ঠান ও রিসেপশনের প্রবেশাধিকার ছিল। আর ভিআইপি টিকিটের দাম দুইজনের জন্য ৯৯৭ ডলার (প্রায় ৮৩,০০০ টাকা), যেখানে বিশেষ সুবিধা হিসেবে রাখা হয়েছিল রিহার্সাল ডিনার, ‘বায়োহ্যাকিং ব্রাঞ্চ’, বিয়ের পর সুস্থতা ফেরানোর সেশন এবং এমনকি বিয়ের প্রোগ্রামে ব্র্যান্ডের নাম উল্লেখের সুযোগ।
বিক্রি হলো ১৩০ টিকিট
এই অভিনব পদ্ধতিতে বিক্রি হয়েছে ১০০টি সাধারণ টিকিট ও ৩০টি ভিআইপি টিকিট। ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও বন্ধুরা বিনামূল্যে আমন্ত্রিত ছিলেন, তবে দম্পতির পেশাগত ও সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্কের সদস্যরা কিনেছেন টিকিট।
অভিনব আয়োজন ও অতিথি আপ্যায়ন
অনুষ্ঠানে ছিল বিলাসবহুল আইসক্রিম, কুকি ও কেক পরিবেশন। সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন লাইভ ডিজে ও শিল্পীরা। ভিআইপি অতিথিদের জন্য ছিল শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম, রেড লাইট থেরাপি, এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা উন্নত করার সেশন। যদিও সামাজিক মাধ্যমে কেউ কেউ এই ধারণাকে ‘টাকা রোজগারের কৌশল’ বা ‘খুঁটিনাটি বাণিজ্যিকতা’ বলে সমালোচনা করেছেন, দম্পতি জানিয়েছেন তাদের উদ্দেশ্য কখনোই লাভ করা ছিল না। বরং তারা অনুষ্ঠানকে আর্থিকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালী করতে চেয়েছেন।
দানের অর্থ কেনিয়ায়
বিয়ের রাতেই তারা বাড়তি আয় হিসেবে ৯৬,২০০ ডলার (প্রায় ৮০ লাখ টাকা) দান করেন Village Impact নামের এক অলাভজনক সংস্থায়, যা কেনিয়ায় শিক্ষা ও পরিকাঠামো উন্নয়নে কাজ করে। পরদিনের পোস্ট-ওয়েডিং ব্রাঞ্চ থেকে আরও অর্থ জোগাড় হয়, ফলে মোট দানের পরিমাণ দাঁড়ায় ১,৩২,৫৫০ ডলার (প্রায় ১.১৬ কোটি টাকা)। ২০২৬ সালে দম্পতি কেনিয়া সফরে যাবেন, যেখানে তারা নিজ হাতে নির্মাণে সাহায্য করবেন সেই স্কুল, যা তাদের বিয়ের থেকে প্রাপ্ত টাকায় তৈরি হবে।
