আজকাল ওয়েবডেস্ক: মার্কিন-চিন শুল্কযুদ্ধে সাময়িক বিরতি। দুই বৃহৎ অর্থনীতির দেশই আপাতত ৯০ দিনের জন্য একে অন্যের পণ্যের উপর শুল্কের হার ১১৫ শতাংশ কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুল্ক কমাতে সম্মতি জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোলান্ড ট্রাম্প ও চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। 

১২৫ ও ১৪৫ শতাংশ পারস্পরিক শুল্কের পরিবর্তে, আগামী ৯০ দিনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিনা পণ্যের উপর শুল্ক ১৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করবে, যেখানে চিন আমেরিকান আমদানির উপর শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করবে। চিন, মার্কিন পণ্যে ১০ শতাংশ ও আমেরিকা ১৪৫ শতাংশের পরিবর্তে মাত্র ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে।

সুইজ়ারল্যান্ডের জেনেভায় গত সপ্তাহে বৈঠকে বসেছিলেন চিন এবং আমেরিকার প্রতিনিধিরা। জেনেভায় সেই বৈঠকের পরেই দু'দেশের শুল্কযুদ্ধে সাময়িক বিরতির সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া, চিনা ভাইস প্রিমিয়ার হি লাইফেং এবং মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট ও মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ারের নেতৃত্বে উভয় পক্ষই অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করতেও সম্মত হয়েছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, বেসেন্ট জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, আমাদের একটি অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। ভয় প্রতিনিধিদলের ঐকমত্য হলো যে কোনও পক্ষই বিচ্ছিন্নতা চায় না।"

মার্কিন মসনদে দ্বিতীয়বার ডোনাল্ড ট্রাম্প বসার পরেই আমেরিকা-চিন বাণিজ্যিক সম্পর্কের উপর প্রভাব পড়তে শুরু করে। চিনের সঙ্গে সরাসরি শুল্কযুদ্ধে ঝাঁপান ট্রাম্প। ব্যথা নিরাময়ের ওষুধ ফেন্টানাইলকে কেন্দ্র করে বিরোধের সূত্রপাত। ট্রাম্পের অভিযোগ ছিল, আমেরিকার বাজারে নিষিদ্ধ ব্যথা নিরাময়ের ওষুধ ফেন্টানাইল চিন থেকে মার্কিন মুলুকে প্রবেশ করছে। 

ওই একই সময়ে ট্রাম্প কানাডা, মেক্সিকো এবং চিনের উপর শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নেন। পরে ভারত-সহ আরও বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক চাপান ট্রাম্প। শুল্ক বৃদ্ধি হয় চিনা পণ্যের উপরেও। প্রত্যাঘাত করে বেজিং। তারাও মার্কিন পণ্যে পাল্টা শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এই ভাবে দফায় দফায় একে অন্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি চলে।

চলতি বছরের শুরুর দিকেই চিনা পণ্যের উপর ২০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিল আমেরিকা। পরে অন্য দেশগুলির উপর শুল্ক চাপানোর সময় চিনা পণ্যের উপরে আরও ৩৪ শতাংশ শুল্ক চাপান ট্রাম্প। চিন পাল্টা শুল্ক চাপালে ট্রাম্প আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেন। চিনও ফের মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক চাপায়। এই ভাবেই চলে দফায় দফায় একে অন্যের পণ্যের উপর শুল্ক চাপানো। শেষে আমেরিকার বাজারে চিনা পণ্যের উপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়। চিনা বাজারে মার্কিন পণ্যের উপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করে। 

আমেরিকা-চিন শুল্ক-যুদ্ধে বিশ্বজুড়ে আর্থিক উত্তেজনা ছড়ায়। যা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজারকে উত্তাল করে তুলেছিল এবং মন্দার আশঙ্কা তৈরি করেছিল। আপাতত উভয় দেশের শুল্কযুদ্ধ বিরতিতে স্বস্তির রেশ।