আজকাল ওয়েবডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ায় আইএসআইএস-সংশ্লিষ্ট জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী একটি “শক্তিশালী ও প্রাণঘাতী” হামলা চালিয়েছে। পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সামরিক অভিযানের ঘটনা বিরল বলেই মনে করা হচ্ছে।
নিজের সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল আইএসআইএসের যোদ্ধারা, যাদের তিনি “প্রধানত নিরীহ খ্রিস্টানদের নির্মমভাবে হত্যা করার” জন্য দায়ী করেছেন। ট্রাম্প দাবি করেন, কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে তিনি নিজেই এই হামলার নির্দেশ দিয়েছেন এবং হুঁশিয়ারি দেন, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওপর হামলা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে আরও সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর আফ্রিকা কমান্ড (AFRICOM) সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ জানায়, নাইজেরিয়া সরকারের অনুরোধেই এই হামলা চালানো হয়েছে এবং এতে আইএসআইএস-এর একাধিক জঙ্গি নিহত হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট স্থান, ব্যাপ্তি কিংবা কোনও বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কি না সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়নি।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নাইজেরিয়ায় খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে হিংসা নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করে আসা ট্রাম্প বলেন, তাঁর নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র কখনোই “উগ্র ইসলামি সন্ত্রাসবাদকে” মাথাচাড়া দিতে দেবে না। বরাবরের মতোই উসকানিমূলক ভাষায় তিনি এই ঘোষণার সঙ্গে ক্রিসমাসের শুভেচ্ছা জুড়ে দেন এবং বলেন, হামলা চলতে থাকলে আরও জঙ্গিকে হত্যা করা হবে।
এই বক্তব্যের পেছনে রয়েছে ট্রাম্পের গত অক্টোবরের শেষ দিক থেকে দেওয়া ধারাবাহিক সতর্কবার্তা। সে সময় তিনি দাবি করেছিলেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিস্টধর্ম এক “অস্তিত্ব সংকটে” রয়েছে এবং নাইজেরিয়া সরকার হিংসা দমনে ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্যে পেন্টাগনকে “ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার” বলে উল্লেখ করাও বিতর্কের জন্ম দেয়।
আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ নাইজেরিয়া দীর্ঘদিন ধরেই চরম নিরাপত্তা সংকটে ভুগছে। দেশটিতে ইসলামপন্থি বিদ্রোহ, সশস্ত্র ডাকাতচক্র ও সাম্প্রদায়িক হিংসা একসঙ্গে পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। বোকো হারাম ও আইএসআইএস-ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীগুলি মূলত উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সক্রিয় হলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অপরাধী গ্যাংয়ের তৎপরতা দেশের অন্যান্য এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে।
তবে নাইজেরিয়া সরকার ধারাবাহিকভাবে এই সংঘাতকে শুধুমাত্র খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে আক্রমণ হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করেছে। আবুজার বক্তব্য, জঙ্গি ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি মুসলিম ও খ্রিস্টান উভয় সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষকেই লক্ষ্য করে হামলা চালায়। সরকারের মতে, হিংসার মূল কারণ দারিদ্র্য, দুর্বল প্রশাসন, ভূমি ও সম্পদের ওপর প্রতিযোগিতার মতো জটিল সামাজিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতা।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাইজেরিয়া সরকার ট্রাম্পের মন্তব্যকে বাস্তবতাকে অতিসরলীকরণ বলে মনে করছে এবং বলেছে, এতে ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় সরকারের উদ্যোগ উপেক্ষিত হয়েছে। একই সঙ্গে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করে জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে সামরিক সক্ষমতা জোরদার করার আগ্রহও প্রকাশ করেছে।
নাইজেরিয়ার জনসংখ্যা মূলত উত্তরাঞ্চলে মুসলিম-প্রধান এবং দক্ষিণে খ্রিস্টান-প্রধান হলেও বহু এলাকায় ধর্মীয় বৈচিত্র্য রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, হিংসাকে কেবল ধর্মীয় সংঘাত হিসেবে চিহ্নিত করলে ইতিমধ্যেই স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে।
উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ায় সাম্প্রতিক মার্কিন হামলা আফ্রিকায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে ওয়াশিংটনের সক্রিয় ভূমিকার ইঙ্গিত দেয়। তবে একই সঙ্গে এই প্রশ্নও সামনে আসছে বহিরাগত সামরিক হস্তক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদে ওই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কতটা সহায়ক হবে।
