আজকাল ওয়েবডেস্ক: যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ঘোষণা করেছে যে আগামী বছর থেকে ব্রিটেনের Prestigious Royal College of Defence Studies (RCDS)–এ ইজরায়েলি  পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের ভর্তি স্থগিত করা হবে। গাজায় ইসরায়েল সরকারের সামরিক অভিযান চলমান থাকা অবস্থায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া  হয়েছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের  এক মুখপাত্র সোমবার এএফপিকে বলেন, “ইজরায়েল সরকারের সামরিক অভিযান আরও জোরদার করা সম্পূর্ণ ভুল সিদ্ধান্ত। আমরা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি দাবি করছি।” একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাজ্যের সামরিক শিক্ষাকোর্স দীর্ঘদিন ধরেই নানা দেশের সেনা ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের জন্য উন্মুক্ত থাকে, যেখানে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইন মেনে চলার ওপর জোর দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন:  নার্সের ট্রাউজার নামানো হাঁটুর নিচে, চিকিৎসক ব্যস্ত... অপারেশন থিয়েটারে যৌনতায় লিপ্ত চিকিৎসককে ফের পুনর্বহাল!

চলতি শিক্ষার্থীরা থাকবে কিন্তু করে নতুন ভর্তি স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে লন্ডন। মন্ত্রকে জানিয়েছে, বর্তমান ইজরায়েলি শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে, তবে ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নতুন কোনো ইজরায়েলি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে না। উল্লেখ্য, রয়্যাল কলেজ অব ডিফেন্স স্টাডিজ যুক্তরাজ্যের ডিফেন্স একাডেমির অধীন একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে সামরিক বাহিনী ও সিভিল সার্ভিসের কৌশলগত নেতৃত্ব ও চিন্তাশক্তি গড়ে তুলতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কোর্স পরিচালিত হয়।

ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণাকের  মহাপরিচালক ও ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর শীর্ষ  কর্মকর্তা আমির বারাম, যিনি নিজেও একসময় এই কলেজের ছাত্র ছিলেন, যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্তকে “বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ” ও “যুদ্ধরত মিত্রের প্রতি অবিশ্বাস” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
বারাম ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পাঠানো এক চিঠিতে লিখেছেন, “ইজরায়েলকে বাদ দেওয়া ব্রিটেনের নিরাপত্তার জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।”

পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে গাজা যুদ্ধ নিয়ে লন্ডনের অবস্থান আরও স্পষ্ট হলো। এর আগে ব্রিটিশ সরকার ইজরায়েলে রপ্তানির জন্য কিছু অস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে, যদিও এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ রপ্তানি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
গত সপ্তাহে লন্ডনে অনুষ্ঠিত একটি বড় আন্তর্জাতিক অস্ত্র মেলায় ইজরায়েলি সরকারি কর্মকর্তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। তবে ৫১টি ইজরায়েলি অস্ত্র কোম্পানি, যার মধ্যে এলবিট (Elbit) অন্যতম, প্রদর্শনীতে অংশ নেয়। এ সময় প্যালেস্তাইনপন্থী  কর্মীরা মেলার বাইরে বিক্ষোভ দেখান।

নতুন সরকারের দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করছে ইজরায়েলের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মারের নেতৃত্বাধীন নতুন লেবার সরকার ইজরায়েলের গাজা অভিযানের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল নিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। লন্ডন প্রকাশ্যে বলেছে, প্রায় দুই বছর ধরে চলা গাজার সামরিক অভিযান আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত “ভুল”। এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। একদিকে ব্রিটেন মানবিক আইন মেনে চলার প্রশ্নে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে, অন্যদিকে দীর্ঘদিনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সম্পর্ক নতুন করে পরীক্ষার মুখে পড়ছে।