আজকাল ওয়েবডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির মধ্যে শুক্রবার ওভাল অফিসে অনুষ্ঠিত বৈঠক আমেরিকার রাজনৈতিক মহলে এক বিরল ও অপ্রত্যাশিত ঘটনাপ্রবাহ হিসেবে দেখা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারজুড়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে তীব্র মন্তব্য—মামদানির মুখে ট্রাম্প ছিলেন ‘স্বৈরশাসক’, আর ট্রাম্পের চোখে মামদানি ছিলেন ‘কমিউনিস্ট’—এর মধ্যেও দুই নেতা সহযোগিতার নতুন যুগের ইঙ্গিত দিলেন।
অপ্রত্যাশিত সৌহার্দ্য ও বাস্তববাদী সুর
বৈঠকের পুরোটা সময়জুড়ে দুই নেতার কথাবার্তা ছিল আশ্চর্যজনকভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ। ট্রাম্প নবনির্বাচিত মেয়রকে প্রশংসা করে বলেন, “তিনি একেবারে হঠাৎ উঠে এসেছেন। এটা এক অসাধারণ জয়ের উদাহরণ।” অন্যদিকে মামদানি বৈঠককে বলেন “উৎপাদনশীল”, এবং মূল লক্ষ্য হিসেবে তুলে ধরেন নিউইয়র্কের ৮.৫ মিলিয়ন বাসিন্দার জন্য জীবনযাত্রার খরচ কমানোর যৌথ প্রতিশ্রুতি।
‘কস্ট অব লিভিং’—যে ইস্যু দুই নেতাকে এক করেছে
মামদানি জানান, তাঁর ভোটারদের মধ্যে প্রায় ১০% ছিলেন ট্রাম্প সমর্থক, এবং তাঁদের মুখে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত শব্দ ছিল—“খরচ, খরচ, খরচ”—ভাড়া থেকে খাবারের দাম, বিদ্যুৎ থেকে চিকিৎসা—সব জায়গায় মূল্যবৃদ্ধিই তাঁদের অস্বস্তির কেন্দ্রবিন্দু। ট্রাম্পও এই অভিন্ন উদ্বেগকে স্বাগত জানান, বলেন এটি দুই নেতার মধ্যে সহযোগিতার বড় ভিত্তি তৈরি করেছে।
আবাসন নীতিতে অপ্রত্যাশিত মিল
নিউইয়র্কের দীর্ঘদিনের অস্বচ্ছ ও বৈষম্যমূলক প্রপার্টি ট্যাক্স ব্যবস্থার সংস্কার এবং বৃহৎ পরিসরে আবাসন নির্মাণ—উভয়েই এর প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেন। ট্রাম্প বলেন, “আমি আরও অনেক অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হতে দেখতে চাই।” মামদানি জোর দেন যে ট্যাক্স সংস্কারের দাবি বর্ণভিত্তিক নয়, বরং সম্পূর্ণভাবে ন্যায়সঙ্গত ব্যবস্থার জন্য।
অপরাধ দমনে সমঝোতা
নিউইয়র্ক পুলিশের ৩৫,০০০ সদস্যের বাহিনী বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দেন মামদানি এবং জানান, ছোটখাটো বিষয় নয়, বরং গুরুতর অপরাধের দিকেই বেশি মনোযোগ দেওয়া হবে। ট্রাম্প তাঁর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন—“হত্যাকারী, মাদক ব্যবসায়ী, অপরাধীদের রাস্তায় রাখা যাবে না।”** যদিও অভিবাসন প্রশ্নে মতানৈক্য রয়ে গেছে, দু’জনই সহিংসতা কমানোর অভিন্ন লক্ষ্য তুলে ধরেন।
মিডিয়ায় তীব্র আগ্রহ
ট্রাম্প হাসতে হাসতে বলেন, “প্রেস এই বৈঠক নিয়ে যা করেছে, তা অভূতপূর্ব। এমনটা বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গেও হয়নি।” মামদানির হঠাৎ উত্থান, এবং নিউইয়র্কের জটিল সংকট পরিস্থিতি, বৈঠকটিকে সংবাদমাধ্যমে আরও আকর্ষণীয় করেছে।
প্রচারের কড়া মন্তব্য পেছনে ফেলে একসঙ্গে কাজের বার্তা
অতীতের তীব্র মন্তব্য প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, “আমাকে এর চেয়েও খারাপ বলা হয়েছে।” মামদানি জানান, রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও “নিউইয়র্কারদের সেবা করাই প্রাধান্য”—এমন সুরেই এগোতে চান তারা।
বামপন্থী মামদানি এবং ডানপন্থী ট্রাম্প—তবু এক মঞ্চে
মামদানি একজন পরিচিত ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট—যিনি সামাজিক ন্যায়, সাশ্রয়ী বাসস্থান ও পদ্ধতিগত সংস্কারের পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন। অন্যদিকে ট্রাম্পের রাজনীতি স্পষ্টতই রক্ষণশীল ও জনতাবাদী। নির্বাচনকালে ট্রাম্প তীব্রভাবে আক্রমণ করেছিলেন মামদানিকে।
তবুও বৈঠকে উভয়েই ব্যবহারিক সমাধান খোঁজার ওপর জোর দেন। মামদানি বলেন,“রাজনীতি খুবই বিমূর্ত হয়ে যায়। আমরা চাই বাস্তব সমস্যার সমাধান—অর্থনৈতিক স্বস্তি।” ট্রাম্প জানান, খাদ্য ও জ্বালানির দাম কমছে এবং কন-এডিসনসহ বিদ্যুৎ সংস্থাগুলিকে মূল্য কমাতে হবে।
নিউইয়র্কের রাজনৈতিক ভবিষ্যতে নতুন সম্ভাবনা
গৃহহীনতা, ভাড়া বৃদ্ধি, নিরাপত্তাহীনতা—এই দীর্ঘদিনের সংকটে ভোগা শহরে প্রেসিডেন্ট ও মেয়রের যৌথ অবস্থানকে 'স্বাগত সংকেত' হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে এমন সময়ে, যখন আমেরিকার রাজনৈতিক বিভাজন ইতিহাসের অন্যতম উচ্চতায়। অভিবাসন নীতি এবং বৃহত্তর মতাদর্শগত প্রশ্নে ভিন্নতা রয়ে গেছে। কিন্তু দুই নেতা “বাস্তবমুখী সমাধান”–এর ওপর গুরুত্ব দিতে রাজি।
ট্রাম্প শেষ মন্তব্যে বলেন—“একটি নিরাপদ নিউইয়র্ক মানেই একটি মহান নিউইয়র্ক… এবং আমরা একসাথে কাজ করব।” ট্রাম্প–মামদানি এই অপ্রত্যাশিত সমঝোতা দেখিয়ে দিল—অর্থনৈতিক উদ্বেগ, জীবনযাত্রার চাপ, এবং নাগরিক সমস্যা কখনও কখনও কঠোর মতাদর্শগত বিভাজনকেও অতিক্রম করতে পারে। নতুন মেয়র এবং প্রেসিডেন্টের এই সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা নিউইয়র্কের নগর-সংকট সমাধানে এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
