আজকাল ওয়েবডেস্ক: আজ যে বন্ধু, কাল সে নয়। পাঠাশালা, কিংবা নিছক কলেজের কথা নয়, বিশ্বের রাজনীতিতেও যেন এই সত্যি এখন একেবারে প্রকাশ্যে। অবশ্যই তার কেন্দ্রে স্বার্থ। একদিকে আমেরিকার শুল্ক নীতি, অন্যদিকে তার প্রেক্ষিতে বদলে যাওয়া ভূ রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক কুটনীতি সম্পর্ক। গত কয়েকমাসে বারে বারে বদলে যাওয়া সমীকরণ এসেছে প্রকাশ্যে। তাতেই যেন আলোচনা আরও এক কদম বাড়িয়ে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো।
সোমবারেই চীন থেকে সরাসরি সামনে এসেছিল ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের বিষয়, সামনে এসেছিল মোদি-পুতিন খোশমেজাজের ছবি। একসঙ্গে হাসিমুখে, একই গাড়িতে যাত্রার বিষয়টিও। চীন-ভারত-রাশিয়া কি তাহলে নয়া অ্যালাই? এই প্রশ্ন যখন খচখচ করছে বিশ্বের কূটনৈতিক মহলে, তখনই সামনে এসেছে নাভারোর বক্তব্য। কী বলেছেন তিনি?
সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, নাভারো রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য সম্পর্কের তীব্র সমালোচনা করেছেন। সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনের শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠককে 'লজ্জাজনক' বলেও অ্যাখ্যা দিয়েছেন বলে খবর সূত্রের। সূত্রের খবর, নাভারো বলেছেন, 'আমি নিশ্চিত নই তিনি কী ভাবছেন। আমরা আশা করি, তিনি বুঝতে পারবেন যে তাঁর রাশিয়ার সঙ্গে নয়, আমাদের সঙ্গে থাকা উচিত।'এর আগে নাভারো ভারতকে শুল্কের মহারাজা বলেও অভিহিত করেছিলেন। ভারতীয় পণ্যের উপর ট্রাম্প ২৫ এবং ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সময় তিনি বলেছিলেন, 'ভারতের সঙ্গে দ্বিমুখী সমস্যা রয়েছে। পঁচিশ শতাংশ শুল্ক পারস্পরিক - অন্যায্য বাণিজ্যের কারণে, এবং বাকি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কারণ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনছে।'
অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন অন্য কথা। বলছেন ট্রাম্পের শুল্ক-জব্দের বিষয়টি আদতেই ব্যুমেরাং হয়ে ফিরেছে। তাঁর কারণেই আরও কাছাকাছি মোদি-পুতিন! চীনের তিয়ানজিনে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের পর সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের গন্তব্যে একই গাড়িতে পাশাপাশি বসে গেলেন।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের তাৎপর্য
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাশিয়ার থেকে ভারতের তেল কেনার নিন্দায় মুখর। তাঁর যুক্তি ভারত যে টাকায় তেল কিনছে তা ইউক্রেনের উপর হামলার জন্য খরচ করছে মস্কো। শাস্তিস্বরূপ ভারতের উপর ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্কও আরোপ করেছে আমেরিকা। কিন্তু ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপের পরও মাথা নত করতে রাজি নয় ভারত। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যে দু'পক্ষের বৈঠক বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ট্রাম্প নতুন দিল্লিকে ইউক্রেনে পুতিনের যুদ্ধে অর্থায়নের জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি সোমবার পুতিনকে বলেন, ১৪০ কোটি ভারতীয় এই বছরের শেষের দিকে তাঁর ভারত সফরের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। রাশিয়া এবং ইউক্রেনযে দ্রুত তাদের যুদ্ধের অবসান ঘটাবে বলেও আশা মোদির, পুতিনকে তিনি সেকথা জানিয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, পুতিন এসসিও সম্মেলন স্থল থেকে রিটজ-কার্লটন হোটেলে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গেই একই গাড়িতে যেতে চেয়েছিলেন। একসঙ্গে যাওয়ার জন্য তিনি মোদির জন্য মিনিট দশ অপেক্ষা করেন বলেও জানা গিয়েছে।
