আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইথিওপিয়ার হায়লি গুব্বি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি সতর্কবার্তা দিয়ে গিয়েছে যে, একই রকম আরও একটি ঘটনা, এমনকি আরও বড় ঘটনা, খুব শীঘ্রই ঘটতে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা যদিও মাত্র কয়েকটি আগ্নেয়গিরির দিকে নজর রাখছেন, কিন্তু একটি নীরব আগ্নেয়গিরি যা কেউ দেখছে না, তা বিশ্বব্যাপী বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।
প্রায় ১২,০০০ বছর পর অগ্ন্যুৎপাতের ফলে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে বিশ্ব এই ধরনের আকস্মিক প্রাকৃতিক ঘটনা মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত নয়। আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ মাইক ক্যাসিডি ‘দ্য কনভার্সেশন’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে লিখেছেন, সিসিলির মাউন্ট এটনা বা আমেরিকার ইয়েলোস্টোনের মতো সক্রিয় আগ্নেয়গিরির দিকে নজর থাকলেও, দীর্ঘদিন ধরে নীরব থাকা আগ্নেয়গিরি পরবর্তী বৈশ্বিক বিপর্যয় ডেকে আনবে। তিনি লিখেছেন যে, এই ‘লুকনো’ আগ্নেয়গিরিগুলি বেশিরভাগ মানুষের ধারণার চেয়ে বেশি ঘন ঘন অগ্ন্যুৎপাত করে। উত্তর ইথিওপিয়ার আফার অঞ্চলের হায়লি গুব্বি আগ্নেয়গিরিটি এমনই একটি উদাহরণ। ১১,৭০০ বছর পর ২৩ নভেম্বর এটিতে অগ্ন্যুৎপাত ঘটে এবং হলোসিন যুগ অর্থাৎ শেষ বরফ যুগের শেষের পর থেকে প্রথমবারের মতো। এর বিস্ফোরণে ৪৫,০০০ ফুট উচ্চতায় ছাইয়ের মেঘ উঠে গিয়েছে। সেই মেঘ উত্তর-পূর্ব দিকে উত্তর ভারতের দিকে ভেসে এসেছিল।
ক্যাসিডি মেক্সিকান আগ্নেয়গিরি এল চিচোনের উদাহরণ দিয়েছেনছ। যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সুপ্ত থাকার পর ১৯৮২ সালে অগ্ন্যুৎপাত করে। এটি পরিচিত আগ্নেয়গিরি ছিল না। তাই এটিকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল না। উত্তপ্ত পাথর, গ্যাস এবং ছাই নদী ভরাট করে এবং প্রচুর বাড়ি ধ্বংস করে। এর ফলে ২০০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যান এবং ২০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হন। আগ্নেয়গিরি থেকে নিঃসৃত সালফার উপরের বায়ুমণ্ডলে প্রতিফলিত কণা তৈরি করার ফলে জলবায়ুতেও একটি বড় পরিবর্তন ঘটে। উত্তর গোলার্ধ ঠান্ডা হয়ে যায় এবং আফ্রিকান মৌসুমি বায়ু দক্ষিণ দিকে সরে যায়, যার ফলে চরম খরা দেখা দেয়।
তিনি দাবি করেছেন, “সক্রিয় আগ্নেয়গিরির অর্ধেকেরও কম পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা এখনও সুপরিচিত কয়েকটি আগ্নেয়গিরির উপর অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে কেন্দ্রীভূত।” তিনি আরও বলেন, “ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স এবং ভানুয়াতুর ১৬০টি আগ্নেয়গিরির সম্মিলিত গবেষণার চেয়ে একটি আগ্নেয়গিরির (মাউন্ট এটনা) উপর প্রকাশিত গবেষণাপত্র বেশি।”
ক্যাসিডি সতর্ক করেছেন যে, হঠাৎ করে বড় আকারের আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত দুর্ভিক্ষ, রোগের প্রাদুর্ভাব এবং বড় সামাজিক বিশৃঙ্খলার কারণ হতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের এখনও এই ভবিষ্যতের ঝুঁকিগুলি পূর্বাভাস বা পরিচালনা করার জন্য একটি বিশ্বব্যাপী ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। তিনি আরও সতর্ক করে বলেন যে, তিন-চতুর্থাংশ বড় আকারের অগ্ন্যুৎপাত এমন আগ্নেয়গিরিতে হয়েছে যা কমপক্ষে ১০০ বছর ধরে শান্ত ছিল। ক্যাসিডি অগ্ন্যুৎপাতের পরে প্রতিক্রিয়া জানানোর পরিবর্তে সক্রিয় পদক্ষেপ এবং প্রস্তুতির উপর জোর দিয়েছেন।
