আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফ্রান্সের কুখ্যাত অপরাধী নিকো ক্লক্স—যিনি ‘ভ্যাম্পায়ার অব প্যারিস’ নামে পরিচিত—সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজের নরখাদক প্রবণতা ও মানবমাংস ভক্ষণের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। শৈশব থেকেই মৃত্যু, রক্ত ও বিকৃত কল্পনার প্রতি আকর্ষণ তাকে নিয়ে গিয়েছে মর্গ থেকে হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত, আর সেই পথচলার রূপ আরও একবার প্রকাশ্যে এসেছে।

শৈশবেই জন্ম নেয় বিকৃত আকর্ষণ

নিকো ক্লক্স জানিয়েছেন, মাত্র দশ বছর বয়সে তাঁর দাদার আকস্মিক মৃত্যু তাকে গভীরভাবে আঘাত করে। এরপর থেকেই মৃত্যু নিয়ে অস্বাভাবিক কৌতূহল ও অন্ধকারময় কল্পনার সূচনা। বারো বছর বয়সে কুখ্যাত জাপানি নরখাদক ইস্সেই সাগাওয়া সম্পর্কে পড়ার পর তার মধ্যে প্রথম মানবমাংস ভক্ষণের কল্পনা তৈরি হয়। ক্লক্স বলেন, “আমি কামড়ানো, দাঁত দিয়ে মাংস ছিঁড়ে ফেলার মনস্তাত্ত্বিক কল্পনা করতে শুরু করি। এটা এক ধরনের ফেটিশে পরিণত হয়েছিল।”

মর্গেই প্রথম মানবমাংস ভক্ষণ

বিকৃত আকর্ষণ পূরণের সুযোগ আসে যখন তিনি প্যারিসের একটি হাসপাতালের মর্গে কাজ পান। সে সময় ফ্রান্সে মর্গ কর্মী হতে আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের দরকার ছিল না। ফলে সহজেই মৃতদেহের সংস্পর্শে কাজ করার সুযোগ মিলেছিল। তিনি জানান, “অটোপসির সময় যখন আমাকে একা রেখে যাওয়া হতো, তখন মৃতদেহ থেকে ছোট ছোট মাংসের টুকরো কেটে কাঁচা খেতাম। পরে সেগুলো বাড়ি  নিয়ে বিভিন্নভাবে রান্নাও করতাম।”

মর্গের ‘স্বল্প সরবরাহ’ থেকে নেমে আসে হত্যার পথে

মর্গে চুরি করে পাওয়া সামান্য মানবমাংস ক্লক্সের “ক্রেভিং” মেটাতে পারেনি। ফলে তিনি পরিকল্পনা করেন সরাসরি মানুষ হত্যা করে মাংস সংগ্রহের। তিনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচিত হন টিয়েরি বিসোঁনিয়ে নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। ক্লক্স পরে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেন, উদ্দেশ্য ছিল তার দেহের মাংস সংগ্রহ করা। তবে পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই তিনি বাধাপ্রাপ্ত হন।

গ্রেপ্তার, শাস্তি এবং মুক্তি

অবশেষে এক ভিন্ন অপরাধ—ভুক্তভোগীর ব্যাংক চেক জাল করে ভিসিআর কেনার চেষ্টা—ক্লক্সকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়। পরে হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অভিযোগে তাকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সাত বছর চার মাস কারাভোগের পর তিনি মুক্তি পান।

মানবমাংসের স্বাদ নিয়ে ক্লক্সের ব্যাখ্যা

মানুষেরা সর্বদা তাকে জিজ্ঞেস করে মানবমাংস কেমন স্বাদের—এমনটিই জানান ক্লক্স। তিনি বলেন, স্বাদ নয়, বরং “রাশ”, উত্তেজনাই তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। তার ভাষায়, “আমি বলতে পারি মানবমাংস ঘোড়ার মাংসের মতো। কারণ তখন আমি হর্স টার্টার খেতাম। কিন্তু বিষয়টি একেবারেই স্বাদের জন্য ছিল না। এটা ছিল এমন এক অনুভূতি, যা আমাকে ক্রমাগত উত্তেজিত রাখত।”

হত্যার উদ্দেশ্য ছিল ‘মাংস সংগ্রহ’

তিনি আরও যোগ করেন, “হত্যা করার লক্ষ্য ছিল মাংস পাওয়া। মর্গ থেকে ছোট টুকরো খেয়ে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, তা আমাকে হত্যায় ঠেলে দেয়। আমি শুধু মাংস নিয়ে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলাম।”

এক অপরাধবৃত্তের অন্ধকার অধ্যায়

নিকো ক্লক্সের এই স্বীকারোক্তি ফ্রান্স-সহ আন্তর্জাতিক মহলে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে। মানবমন, বিকৃত যৌন-ফেটিশ, মর্গের মতো সংবেদনশীল জায়গায় নিয়ন্ত্রণহীন প্রবেশাধিকার—সব মিলিয়ে এই ঘটনা প্রশ্ন তোলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও মানসিক স্বাস্থ্যের জটিলতা নিয়ে।
নিকো ক্লক্সের কাহিনি শুধু একটি অপরাধগাথা নয়, বরং সমাজের অন্ধকার কোণগুলি কীভাবে নজরদারির অভাবে বিস্ফোরিত হতে পারে—তারই এক হ chilling উদাহরণ।