আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত কয়েকদিন ধরেই জোর চর্চা। চর্চা পাকিস্তানের ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে। বিশ্বের রাজনীতিতে আলোচনা, এবার নাকি বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতি হতে চলেছে পাকিস্তানের। অর্থাৎ শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর যেমন সোনার বাংলাদেশ রাতারাতি সেনার বাংলাদেশ হয়েছিল, তেমনই নাকি এবার সেনাবাহিনী দখল করবে পাকিস্তানের ক্ষমতা। এর আগে প্রধানমন্ত্রী এই জল্পনা উড়িয়ে দিলেও, তার নিরশন হয়নি। এবার খোদ আসিম মুনির মুখ খুলেছেন বলে তথ্য।
ডেইলি জং পত্রিকার সিনিয়র এডিটর সুহেল ওয়ারাইচ শনিবার এক লিখেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফেরার পথে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে মুনিরের সঙ্গে সাক্ষাত হয়েছিল। সেখানেই একান্তে বেশকিছু জটিল বিষয়ে কথোপকথন হয় তাঁদের। সেখানে একটি অনুষ্ঠানেও নাকি তিনি বলেছিলেন, 'ঈশ্বর আমাকে দেশ রক্ষা করার জন্য পাঠিয়েছেন। আমার তার বাইরে কোনও রাজনৈতিক পদের চাহিদা নেই।'
উল্লেখ্য, ক্ষমতা দখলের বিষয়ে পাকিস্তানের সেনা প্রধানদের নিয়ে জল্পনা হয়েছে বারেবারে। মুনির ফিল্ড মার্শাল পদে বপ্সার ;অর থেকেই জল্পনা জোরদার হয় যে, এবার তিনি রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারিকে সরিয়ে ওই পদে বসবেন। জল্পনার আরও কারণ, পাকিস্তানের ইতিহাসে মুনির ওই পদের দ্বিতীয় ব্যক্তি এবং যিনি প্রথম অর্থাৎ আইয়ুব খান, তিনি এক সময়ে পাক-ক্ষমতার শীর্ষে বসেছিলেন। জল্পনা, তাহলে কি ওই একই জুতোয় পা গলাবেন মুনিরও?
আরও পড়ুন: সোনার দর ৮৮ টাকা, এক লিটার পেট্রোল ২৭ পয়সায়! ভিমরি খেলেও তথ্য সত্য, জানুন সবটা
ওয়ারাইচ জানিয়েছেন, 'ব্রাসেলসের আমার সঙ্গে দুই ঘন্টাব্যাপী বৈঠকে জেনারেল আসিম মুনির স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে পরিবর্তনের গুজব সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি আদেউ ক্ষমতাকাঙ্খিত নন। আর এই মুহূর্তে সে দেশে রাজনীতিতে পরিবর্তনের কোনও সম্ভাবনা নেই।' যাঁরা দেশের ভাল চায় না, দেশের সুস্থির পরিস্থিতির পক্ষে নয়, তারাই এই ধরনেই বিভ্রান্তিকর বিষয় নিয়ে আলচনা করে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তথ্য তেমনটাই।
মুনির প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, দিনকয়েক আগে তিনি বলেন, 'আমরা একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। যদি আমরা মনে করি আমরা ধ্বংসের দিকে যাচ্ছি, তাহলে আমরা আমাদের সঙ্গে অর্ধেক বিশ্বকে ধ্বংস করে দেব।' সেক্ষেত্রে যদিও আলোচনার বিষয়, মুনিরের সাহসী দাবি সত্ত্বেও, পাকিস্তানের কি বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক হামলার ক্ষমতা আছে?আবার, মুনির ভারতের সিন্ধু নদী অববাহিকায় যেকোনো ধরনের পরিকাঠামো নির্মাণ ধ্বংসেরও হুমকি দেন। তিনি দাবি করেন, ভারতের এই প্রকল্পগুলো পাকিস্তানের জন্য জলের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করলে তা ২৫ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাকে বিপন্ন করবে। তিনি বলেন, “আমরা অপেক্ষা করব ভারত কোনও বাঁধ বানানোর জন্য, আর একবার বানালে ১০টা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ওটা উড়িয়ে দেব… সিন্ধু নদী ভারতীয়দের পারিবারিক সম্পত্তি নয়। আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের কোনও ঘাটতি নেই, আলহামদুলিল্লাহ।”
সেনাপ্রধান জেনারেলের দাবির ঠিক পরে পরেই সামনে আসে আরও এক ভয়ানক দাবি। জানা যায়, পাকিস্তানের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি সোমবার ভারতের বিরুদ্ধে আরও এক দফা যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন। তিনি নাকি জানিয়েছিলেন, নয়া দিল্লি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে, জল নিয়েই যুদ্ধ বাঁধবে।
এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বিলাওয়াল ভুট্টো দাবি করেন, সিন্ধু নদীর জল পাকিস্তান থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং সভ্যতার উপর আক্রমণ, বিশেষ করে সিন্ধুর উপর। বিলাওয়ালকে উদ্ধৃত করে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, তিনি বলেছেন, ভারতের আগ্রাসী জলনীতি তুলে ধরার জন্যই তিনি সেসব প্রসঙ্গ উত্থাপন করছেন। তিনি বলেন, যুদ্ধের ক্ষেত্রে মোদির মুখোমুখি হওয়ার শক্তি পাকিস্তানের জনগণের রয়েছে।
অন্যদিকে সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রের খবর, পরপর যুদ্ধ হুমকি একদিকে। অন্যদিকে আবার, ইসলামাবাদ ভারতকে অবিলম্বে সিন্ধু জল চুক্তির স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে, যা মে মাস থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর স্থগিত করে রেখেছে নয়াদিল্লি। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে যে তারা চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাকিস্তানের সামরিক প্রধান আসিম মুনিরের পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি এবং জল বণ্টন চুক্তিতে ভারতের অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টোর যুদ্ধ ঘোষণার পর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এই অনুরোধ করা হয়েছে বলে খবর সূত্রের।
সূত্রের খবর, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর সোমবার ভারতকে সিন্ধু জল চুক্তির স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার জন্য অনুরোধ করেছে। সে দেশের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, তারা ভারতকে অবিলম্বে সিন্ধু জল চুক্তির স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার এবং চুক্তির বাধ্যবাধকতাগুলি সম্পূর্ণরূপে এবং বিশ্বস্ততার সাথে পালন করার আহ্বান জানাচ্ছে।
