আজকাল ওয়েবডেস্ক: শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীদের শেখানো হয়েছে যে চাপ ও ঘর্ষণ বরফ গলিয়ে দেয়। শীতকালে বরফের ওপর পিছলে পড়ে যাওয়া এটি সাধারণত শরীরের ওজন জুতোর তলার ভেতর দিয়ে চাপ প্রয়োগ করার ফল হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু জার্মানির সারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন গবেষণা জানাচ্ছে, এই ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়। তারা দেখিয়েছেন, বরফের পিচ্ছিলতার আসল কারণ হলো বরফের অণুগুলির ডাইপোল ও সংস্পর্শে থাকা বস্তুর (যেমন জুতোর তলা) ডাইপোলের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া—চাপ বা ঘর্ষণ নয়।


এই গবেষণা করেছেন অধ্যাপক মার্টিন মিউসার এবং তাঁর সহকর্মীরা আখরাফ আতিলা ও সের্গেই সুখোমলিনভ। তাঁরা প্রায় দুশো বছর আগের একটি মডেলকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। সেই মডেলটি প্রস্তাব করেছিলেন লর্ড কেলভিনের ভাই জেমস থম্পসন—যিনি বলেছিলেন চাপ, ঘর্ষণ ও তাপমাত্রাই বরফ গলিয়ে দেয়।


অধ্যাপক মিউসার ব্যাখ্যা করে বলেন, “আসলে বরফের ওপর পাতলা তরল স্তর তৈরি হওয়ার পেছনে চাপ বা ঘর্ষণ তেমন বড় ভূমিকা রাখে না। বরং মূল চালিকা শক্তি হল অণুগত ডাইপোল।”

আরও পড়ুন: দীপাবলিতেই আর এক খুশির খবর! জিএসটি-র এবার কী?


ডাইপোল কী?
একটি অণুর মধ্যে যখন আংশিক ধনাত্মক ও আংশিক ঋণাত্মক চার্জের অঞ্চল থাকে, তখন সেটি একটি ডাইপোল গঠন করে। এর ফলে অণুটি একটি নির্দিষ্ট দিকে মুখ করা মেরুবিশিষ্ট হয়ে ওঠে।


বরফের গঠন
শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে জলের অণুগুলি নিজেদের একটি সুশৃঙ্খল স্ফটিক জালের মধ্যে সাজায়। সব অণুই একইভাবে সারিবদ্ধ হয়ে একটি কঠিন, স্ফটিক কাঠামো তৈরি করে। কেউ যখন বরফের ওপর পা রাখে, তখন জুতোর চাপ বা ঘর্ষণ নয়, বরং জুতোর তলার ডাইপোল বরফের ডাইপোলের সাথে প্রতিক্রিয়া করে। ফলে আগে সুশৃঙ্খল গঠন মুহূর্তেই বিশৃঙ্খল হয়ে যায়।


এই গবেষণা প্রায় ২০০ বছরের প্রচলিত ধারণা উল্টে দিল। এর পাশাপাশি আরেকটি ভুল ধারণাও ভাঙা হলো। এতদিন মনে করা হতো “মাইনাস ৪০°C এর নিচে স্কি করা সম্ভব নয়, কারণ এত ঠান্ডায় স্কির নিচে তরল স্তর তৈরি হতে পারে না।” কিন্তু মিউসারের মতে, ডাইপোল মিথস্ক্রিয়া চরম নিম্ন তাপমাত্রাতেও টিকে থাকে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, শূন্য কেলভিনের কাছাকাছি তাপমাত্রাতেও বরফ ও স্কির সংযোগস্থলে পাতলা তরল স্তর তৈরি হয়। যদিও তখন সেটি মধুর থেকেও ঘন। যাকে আমরা সাধারণ জলে চিনতেই পারব না। ফলে স্কি করা বাস্তবে সম্ভব নয়, কিন্তু স্তরটি থাকেই।


কারও শীতে পিছলে আঘাত পেলে তাঁর জন্য চাপ, ঘর্ষণ না ডাইপোল কোনটি দায়ী তা বিশেষ গুরুত্ব পায় না। কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের জন্য এই পার্থক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আবিষ্কার নিয়ে বৈজ্ঞানিক মহলে তীব্র আগ্রহ দেখা দিয়েছে, আর ভবিষ্যতে এর প্রভাব ধীরে ধীরে স্পষ্ট হবে।