আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তর থাইল্যান্ডের মায়ে হং সন প্রদেশের ফা ড্যাং গুহায় বিজ্ঞানীরা এক নতুন প্রজাতির কাঁটাযুক্ত ড্রাগন মিলিপিডের সন্ধান পেয়েছেন। গুহার দেয়ালে মিলিপিডের মিলনের দৃশ্য নথিবদ্ধ করার পর গবেষক দলটি নিশ্চিত হয় যে এটি একটি সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতি। তারা দেখতে পান, এর ডিএনএ নিকটতম আত্মীয় প্রজাতিগুলির তুলনায় অন্তত ১০ শতাংশ ভিন্ন — যা জীববিজ্ঞানে এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবধান হিসেবে ধরা হয়।


এই আবিষ্কারটি ২০২৪ সালের একটি জীববৈচিত্র্য দেখার সময় হয়। মিলিপিডটি আর্দ্র পাথরের গায়ে চলাফেরা করে এবং যেখানে শৈবাল জমে পাথর ভেজা থাকে, সেই সংকীর্ণ ফাটলগুলিতে আশ্রয় নেয়। গবেষণা পরিচালনা করেন থাইল্যান্ডের খন কায়েন বিশ্ববিদ্যালয় ও চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী রুত্তাপন সিরিসনচাই, যিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিলিপিড বৈচিত্র্য ও শ্রেণিবিন্যাস নিয়ে কাজ করেন।


এই প্রজাতিটি Desmoxytes গণভুক্ত, যা তাদের ধারালো পার্শ্বীয় কাঁটা ও অলংকৃত দেহরেখার জন্য পরিচিত। কাঁটাগুলি ডানার মতো নয়, বরং শরীরের প্রতিটি রিং থেকে তির্যকভাবে বেরিয়ে আসে, ফলে পুরো দেহটি খাঁজকাটা বা করাতের দাঁতের মতো দেখায়। নতুন প্রজাতির দেহ গাঢ় বাদামী রঙের, যা ভেজা চুনাপাথরের সঙ্গে মিশে যেতে সাহায্য করে। এর লম্বা পা ও সরু অ্যান্টেনা সংকীর্ণ ফাটলে অনুসন্ধান ও চলাচলে সহায়ক।


গবেষকেরা এখন পর্যন্ত এই প্রজাতিকে শুধু ফা ড্যাং গুহা ও তার আশপাশের কয়েকটি স্থানে দেখতে পেয়েছেন। এই সীমিত বিস্তৃতি প্রমাণ করে, এটি একধরনের বিশেষায়িত প্রাণী—যারা স্থিতিশীল আর্দ্র পাথুরে মাইক্রোক্লাইমেটে নির্ভরশীল। এমন প্রজাতিগুলোকে জীববিজ্ঞানে ‘এনডেমিক’ বলা হয়, অর্থাৎ তারা শুধু নির্দিষ্ট স্থানে পাওয়া যায় এবং অন্য কোথাও নয়।


গবেষণায় ব্যবহৃত হয় ‘ইন্টিগ্রেটিভ ট্যাক্সোনমি’ পদ্ধতি, যেখানে প্রাণীর বাহ্যিক গঠন ও ডিএনএ বিশ্লেষণ একত্রে ব্যবহার করা হয় প্রজাতি নির্ধারণে। তারা তিনটি জিন অঞ্চল তুলনা করে এক ফাইলোজেনি বা বংশবৃক্ষ তৈরি করেন, যাতে বোঝা যায় প্রজাতিগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন। এর মধ্যে ‘COI’ নামের জিনটি প্রাণী শনাক্তকরণে বিশেষ কার্যকর, কারণ এর একটি ক্ষুদ্র অংশ দিয়েই প্রজাতি পার্থক্য বোঝা যায়।


ডিএনএ বিশ্লেষণে দেখা যায়, নতুন মিলিপিডের ক্রম তার নিকটতম Desmoxytes আত্মীয়দের তুলনায় প্রায় ১১ থেকে ১৯ শতাংশ ভিন্ন। একই এলাকার জীবের জন্য এই পার্থক্য যথেষ্ট বড়। তবে শুধুমাত্র জিনগত পার্থক্য নয়, গঠনগত বৈশিষ্ট্যও ছিল গুরুত্বপূর্ণ—বিশেষত পুরুষ মিলিপিডের প্রজনন অঙ্গ ‘গোনোপড’, যার আকার সাধারণত প্রজাতিভেদে আলাদা হয়।


এই প্রাণী চুনাপাথরের কার্স্ট ভূপ্রকৃতিতে বসবাস করে, যা জল দ্বারা ধীরে ধীরে ক্ষয়ে গুহা, সিংকহোল ও ঝরনা তৈরি করে। এই ধরনের অঞ্চলে আর্দ্রতা, ছায়া এবং শৈবালের আস্তরণ মিলিপিডের জীবনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলে। গুহার দেয়ালে বা ভেজা পাথরে এদের ধীরে চলাচল করতে দেখা গেছে।


নতুন প্রজাতিটির নাম দেওয়া হয়েছে Desmoxytes chaofa। এর গাঢ় বাদামী রঙ ও কাঁটাযুক্ত দেহরেখা প্রজাতিটির গোষ্ঠীগত বৈশিষ্ট্য বজায় রাখে। লম্বা পা ও অ্যান্টেনা পিচ্ছিল পাথরে ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। রঙ, দেহের অনুপাত ও প্রজনন অঙ্গের গঠন—সব মিলিয়ে এটি আলাদা প্রজাতি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।


একই গবেষণায় আরও একটি প্রজাতির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, যার পা গোলাপি রঙের এবং এটি অন্য একটি প্রদেশে পাওয়া গেছে। এই দুইটি আবিষ্কার প্রমাণ করে, থাইল্যান্ডের চুনাপাথর গুহা ও শিলাস্তরের অজানা জগতে এখনও অগণিত জীববৈচিত্র্য লুকিয়ে রয়েছে।