এমন কোনও জায়গার কথা শুনেছেন যা মানচিত্রে নেই, কিন্তু বাস্তবে অস্বস্তি রয়েছে। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীতে এমন একটি দেশ রয়েছে। নাম তার ট্রান্সনিস্ট্রিয়া। পূর্ব ইউরোপের ছোট্ট এই অঞ্চলটি মলডোভা ও ইউক্রেনের মাঝখানে ডিনিস্টার নদীর তীরে অবস্থিত।
2
8
এখানকার মানুষ নিজেদের দেশকে প্রিদনেস্ট্রোভিয়ান মলডোভিয়ান রিপাবলিক (পিএমআর) নামে পরিচিত করে, কিন্তু এখনও পৃথিবীর কোনও দেশ বা জাতিসংঘ এই দেশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়নি।
3
8
১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার সময় মলডোভার সঙ্গে একাধিক রাজনৈতিক মতভেদে এই অঞ্চলটি নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করে। ১৯৯২ সালে মলডোভার সঙ্গে এক সংক্ষিপ্ত কিন্তু রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর রাশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধ বিরতি হয়। এরপর থেকে ট্রান্সনিস্ট্রিয়া কার্যত স্বাধীনভাবে চলছে, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও মলডোভার অংশ হিসেবেই বিবেচিত।
4
8
এই অঞ্চলে গেলে মনে হয়, সময় যেন কয়েক দশক পেছনে ফিরে গেছে। রাজধানী তিরাসপোলে এখনও দেখা যায় লেনিনের মূর্তি, সোভিয়েত পতাকার হাতুড়ি-হাঁসুয়া প্রতীক, পুরনো ধাঁচের ভবন, আর ভিন্টেজ ট্রাম। এখানকার স্থানীয় মুদ্রা ‘ট্রান্সনিস্ট্রিয়ান রুবল’ শুধু এই অঞ্চলের ভেতরেই চলে, বাইরে এর কোনও মূল্য নেই।
5
8
যদিও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি নেই, তবু এই অঞ্চলে আছে নিজস্ব সংবিধান, সংসদ, পুলিশ, এমনকি নিজস্ব ডাকটিকিটও। তাদের নিজস্ব পতাকায় রয়ে গেছে পুরনো সোভিয়েত প্রতীক, যা আজ পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায় না।
6
8
অর্থনৈতিক দিক থেকে ট্রান্সনিস্ট্রিয়া বেশ দুর্বল। মূলত রাশিয়ার সহায়তা ও স্থানীয় কারখানার ওপর নির্ভরশীল। যুব সম্প্রদায়ের অনেকেই কাজের খোঁজে রাশিয়া বা ইউরোপের অন্য দেশে চলে যায়। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না থাকায় এখানকার মানুষ প্রায় ‘অদৃশ্য নাগরিক’ হিসেবে জীবনযাপন করেন। তবু তাঁদের গর্ব, তাঁরা সোভিয়েত ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রেখেছে।
7
8
পর্যটকদের কাছে ট্রান্সনিস্ট্রিয়া যেন এক জীবন্ত টাইম মেশিন। বছরে প্রায় ২০ হাজার মানুষ এখানে আসে সেই ‘অস্তিত্বহীন দেশের’ স্বাদ নিতে। কেউ একে বলেন, “এক জীবন্ত জাদুঘর”, কারওর কাছে, “এক সময়ের সোভিয়েত প্রতিলিপি”। রাজধানীর রাস্তায় হাঁটলে মিলবে সামরিক স্মৃতিস্তম্ভ, পুরনো যুদ্ধের ট্যাঙ্ক, আর স্থানীয় খাবার।
8
8
বিশ্বের চোখে ট্রান্সনিস্ট্রিয়া এক ‘ফ্রোজেন কনফ্লিক্ট’ অঞ্চল অর্থাৎ রাজনৈতিকভাবে স্থবির, কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে বিস্ময়কর। যুদ্ধ ও রাজনীতির ছায়া সত্ত্বেও এখানকার মানুষ আজও শান্তভাবে বসবাস করছে, যেন সময়ের বাইরে এক আলাদা পৃথিবীতে।