আজকাল ওয়েবডেস্ক: বেশি বেশি গাছ লাগানো বিশ্বের তাপমাত্রা কমাতে এবং অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় উপকারিতা পাওয়া যায় যখন গাছ ট্রপিক্যাল অঞ্চলে রোপণ করা হয়। এমনটাই জানিয়ে দিল ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন গবেষণা।
এই গবেষণা থেকে বলা হয়েছে যে গাছ লাগানো জলবায়ুর জন্য সাধারণত উপকারী, কারণ গাছ বাতাস থেকে উষ্ণায়ন সৃষ্টিকারী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে। তবে স্থানীয় তাপমাত্রার প্রভাব নির্ভর করে গাছ কোথায় লাগানো হচ্ছে তার ওপর। উচ্চ অক্ষাংশে (যেমন কানাডা, উত্তর ইউরোপ) বন কখনও সামান্য উষ্ণতা তৈরি করতে পারে। অথচ ট্রপিক্যাল অঞ্চলে গাছ লাগানো অনেক বেশি শীতলীকরণ প্রভাব ফেলে।
কীভাবে গাছ ঠান্ডা করে?
এই ফলাফল আগের ইউসিআর গবেষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে বলা হয়েছিল গাছ লাগানো পৃথিবীর পৃষ্ঠকে বিজ্ঞানীরা যতটা ভেবেছিলেন তার থেকেও বেশি ঠান্ডা করতে পারে। আগের গবেষণা মূলত রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ফোকাস করেছিল, আর নতুন গবেষণা দেখিয়েছে শারীরিক প্রক্রিয়াগুলো কিভাবে ভূমিকা রাখে। এর মধ্যে রয়েছে “ট্রি সোয়েটিং” বা এভাপোট্রান্সপিরেশন। গাছের শিকড় মাটি থেকে জল টেনে নেয়, যা কাণ্ড দিয়ে পাতায় পৌঁছে যায়। ফটোসিনথেসিসের জন্য যখন পাতার রন্ধ্র খোলে, তখন পাতার ভেতরের কিছু জল বাষ্প হয়ে বাতাসে মিশে যায়। এই প্রক্রিয়ায় বাতাস ঠান্ডা হয়, গাছও ঠান্ডা হয়।
আরও পড়ুন: বায়ুদূষণ নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র, কবে থেকে শুরু হবে এই প্রকল্প
এছাড়াও, গাছ সূর্যের আলো মাটিতে পৌঁছানো কমিয়ে দেয়। জলীয় বাষ্প থেকে বাতাস আর্দ্র হয়, আর বেশি আর্দ্রতায় মেঘ গঠন হয়। জলীয় বাষ্প নিজেও সূর্যের কিছুটা তাপ শোষণ করে নেয়। এই সব মিলে গাছের উপস্থিতি আরও ঠান্ডা প্রভাব ফেলে।
গবেষণার ফলাফল
শুধু শারীরিক প্রভাব হিসেব করলে গাছ লাগানোর ফলে বৈশ্বিকভাবে গড় তাপমাত্রা ০.০১° ফারেনহাইট কমতে পারে। তবে ট্রপিক্যাল অঞ্চলে প্রভাবটা বেশি— প্রায় ০.১° ফারেনহাইট, আর কিছু এলাকায় (যেমন মধ্য আফ্রিকা) সর্বোচ্চ ০.৮° ফারেনহাইট পর্যন্ত ঠান্ডা হতে পারে।
এর সঙ্গে কার্বন সিকোয়েস্ট্রেশনের প্রভাব ধরা হলে বিশ্বের শীতলতা গড়ে আরও ০.১৫° ফারেনহাইট পর্যন্ত বাড়তে পারে। গবেষকরা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতের এক গবেষণায় শারীরিক ও কার্বন সাইকেলের সম্মিলিত প্রভাব আরও বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করা হবে।

এই গবেষণায় একটি বাস্তবসম্মত কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে— অর্থাৎ যেখানে বন উজাড় হয়েছে, শুধু সেখানে গাছ লাগানো হয়েছে; মানুষের বসতি বা কৃষিজমিতে নতুন বন তৈরির চেষ্টা করা হয়নি। এছাড়া আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারণে ব্যবহৃত ১২টি ভিন্ন জলবায়ু মডেলের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে ফলাফল আরও নির্ভরযোগ্য হয়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে কানাডা ও উত্তর-পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশে গাছ সূর্যের অতিরিক্ত আলো শোষণ করে তাপমাত্রা কমানোর বদলে বাড়াতে পারে, এবং অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। ফলে সেখান থেকে দেখতে হলে যদি বিশ্বের এই বিশেষ এলাকাতে গাছ লাগানো যায় তাহলে সেটি হবে সকলের কাছে অনেক বেশি মঙ্গলের। যদি এখানে বেশি করে গাছ লাগানো যেতে পারে তাহলে সেখান থেকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা অনেকটাই কম হবে বলেই মনে করছেন গবেষকরা।

