আজকাল ওয়েবডেস্ক: 'জেন জি'র বিক্ষোভে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি কুর্সি ছেড়েছেন। এর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই  পদত্যাগ করলেন নেপালের প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পৌডেল।

মিডিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরেই আন্দোলন শুরু হয় নেপালে। যুব সমাজ রাস্তায় নেমে এই সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে। বিক্ষোভ থামাতে সরকার পদক্ষেপ করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। আন্দোলনের তীব্রতা চরমে ওঠে। সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ২২ জন। আহত ৩৩০-এর বেশি। সোমবার থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মঙ্গলবারও অব্যাহত ছিল। জেন-জেড বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবন, ওলির ব্যক্তিগত বাসভবন এবং অন্যান্য নেপালি কংগ্রেস নেতাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। 

এদিন নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল ও শের বাহাদুর দেউবা এবং বিদ্যুৎমন্ত্রী দীপক খাঁড়কার বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয় বলে খবর। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনার বিভিন্ন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে যেখানে বিক্ষোভকারীদের রাষ্ট্রপতির বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে ভাঙচুর করতে দেখা যায়। প্রথম দিকে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে চেষ্টা করলেও বেশি শক্তি প্রয়োগ করা হয়নি। 

ভয়ে কাঁটা মন্ত্রীরা। একাধিক মন্ত্রী ইতিমধ্যেই ইস্তফা দিয়েছেন। নেপালি সেনাবাহিনী, মন্ত্রীদের সরকারি বাসভবন খালি করতে শুরু করেছে। মন্ত্রীদের তাদের বাসভবন থেকে সরিয়ে হেলিকপ্টারে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া, সংসদ ভবনের আশেপাশে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে, সামরিক সেনানিবাসে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা প্রদান করা হচ্ছে।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির পদত্যাগের পর, কাঠমান্ডু মেট্রোপলিটন সিটির মেয়র বলেন্দ্র শাহ ‘বালেন’ জেন জি বিক্ষোভকারীদের সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার হিংসাত্মক হয়ে ওঠা এই বিক্ষোভ মঙ্গলবারও অব্যাহত ছিল, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমেছিল। কেপি শর্মা ওলি বিকেলে পদত্যাগ করার পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

আরও পড়ুন- তিনিই কী নেপালের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী? ওলির পদত্যাগের পরেই ভেসে উঠছে তাঁর নাম, কে এই বালেন্দ্র শাহ

উল্লেখ্য, বালেন মেয়র পদে জয়লাভ করার পর, মানুষ তাঁকে ভবিষ্যতে একজন সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে শুরু করেন নেপালবাসী। কাঠমান্ডুর ১৫তম মেয়র বালেন্দ্র শাহ (বালেন শাহ নামেও পরিচিত) কেবল একজন রাজনীতিবিদই নন, একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারও। অনেক তরুণ নেপালিদের কাছে তিনি আশা এবং পরিবর্তনের প্রতিনিধি।  তাঁর সাফল্য আরও স্বাধীন প্রার্থীদের রাজনীতিতে পা রাখার জন্য উৎসাহিত করে। এই নতুন শক্তির একটি স্পষ্ট ফলাফল ছিল রবি লামিছানের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় স্বাধীন পার্টি (আরএসপি) এর উত্থান, যা নেপালের সংসদের নিম্নকক্ষে ২১টি আসন জিতেছে। 

কিন্তু বালেন এবং অন্যান্য স্বাধীনরা জাতীয় সরকার পরিচালনার বৃহত্তর এবং আরও জটিল চ্যালেঞ্জগুলি পরিচালনা করতে পারবেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে। মেয়র থাকাকালীন, বালেন কাঠমান্ডুর উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন করেছেন। তিনি রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা এবং পথচারীদের জন্য ফুটপাত মুক্ত ও নিরাপদ রাখার উপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি সরকারি স্কুলগুলির উপর নজরদারি জোরদার করার জন্যও কাজ করেছিলেন এবং কর ফাঁকির অভিযোগে অভিযুক্ত বেসরকারি স্কুলগুলির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। সর্বোপরি, তার সবচেয়ে বড় শক্তি হল তার পরিষ্কার ভাবমূর্তি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অসহনশীলতা নীতি, যার ফলে তিনি জনগণের গভীর শ্রদ্ধা এবং জোরালো সমর্থন অর্জন করেছেন।