আজকাল ওয়েবডেস্ক: মাসখানেক আগে পর্যন্ত তথ্য ছিল এক। কিন্তু এখন বদলে গিয়েছে তা। আর নয়া তথ্যে রীতিমতো ঘুম উড়েছে গবেষক-বিশেষজ্ঞদের। এতদিন পর্যন্ত জানা ছিল, আইসল্যান্ডে কোন সাপ বা অন্যান্য সরীসৃপ নেই। আইসল্যান্ডে হ্রদ, পুকুর, জলাভূমি এবং প্রায় ১৩০০ প্রজাতির বিভিন্ন প্রাণী থাকার পরেও সেখানে বেঁচে থাকে না মশা। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, আইসল্যান্ডের দ্রুত পরিবর্তনশীল আবহাওয়া এবং ঠান্ডা জলবায়ুতে মশা বেঁচে থাকে না। যার ফলে মশার ডিমের বিকাশ এবং ডিম ফুটে লার্ভা হওয়া কঠিন।

তবে সাম্প্রতিককালে একাধিক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনের তথ্য, আইসল্যান্ডে প্রথমবারের মতো মশার দেখা মিলেছে। আইসল্যান্ডের ন্যাচারাল সায়েন্স ইনস্টিটিউটের একজন এন্টোমলজিস্ট ম্যাথিয়াস আলফ্রেওসন, যিনি এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন,  তিনি জানিয়েছেন, একজন গবেষক তাঁর কাছে মশার নমুনা পাঠিয়েছিলেন। জানিয়েছেন, কিওফেল, কেজোসে কুলিসেটা অ্যানুলাটার তিনটি নমুনা পাওয়া গেছে, দুটি স্ত্রী এবং একটি পুরুষ মশা। মথ আকর্ষণ করার লক্ষ্যে ওয়াইন দড়ি ব্যবহার করার সময় ওয়াইন দড়ি থেকে মশার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। সে দেশের রাজধানী থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে মশাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে বলে তথ্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে।

 তবে এই আশঙ্কা ছিলই।  বিজ্ঞানীরা কিছুদিন ধরেই ভবিষ্যদ্বাণী করছিলেন, আইসল্যান্ডের ব্যাপক পরিমাণে জলাভূমি এবং পুকুরের থাকায়, সেগুলি মশাদের প্রজনন আবাসস্থল হিসেবে উপযুক্ত। জলবায়ু এতদিন প্রতিকূল হলেও, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই জোরদার হচ্ছিল আশঙ্কা। 

আরও পড়ুন: ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে মহিলার চুল ধরে ঝুলছেন যুবক! স্রেফ সিট পেতেই মারপিট? ভিডিও ভাইরাল হতেই কমেন্টের বন্যা

আইসল্যান্ড উষ্ণ হচ্ছে দিনে দিনে।  উত্তর গোলার্ধের বাকি অংশের চেয়ে চারগুণ বেশি হারে উষ্ণ হচ্ছে সে দেশ। হিমবাহ ভেঙে পড়ছে।  তবে শুধু আইসল্যান্ডে নয়, জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনে অন্যান্য জায়গাতেও নানা শ্রেণির মশার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনের তথ্য, ব্রিটেনে এই বছর মিশরীয় মশার (এডিস এজিপ্টি) ডিম পাওয়া গেছে এবং কেন্টে এশিয়ান টাইগার মশা (এডিস অ্যালবোপিকটাস)’র উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। এগুলি আক্রমণাত্মক প্রজাতি যা ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং জিকা ভাইরাসের মতো  রোগ ছড়াতে পারে বলেও আশঙ্কা।

সাধারণত, মশা অগভীর, স্থির জলে বংশবৃদ্ধি করে, যেখানে তাদের ডিম ফুটে লার্ভা তৈরি হতে পারে। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন তারা সাধারণত একটি উপযুক্ত এবং স্থিতিশীল তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে। কিন্তু আইসল্যান্ডের পরিস্থিতি আলাদা সাধারণত। সে দেশে জমে থাকা জল বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। আইসল্যান্ডের প্রাকৃতিক নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং দ্রুতগতির জল ব্যবস্থার কারণে, মশার প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয় না।অন্যদিকে আইসল্যান্ডে রেকর্ড করা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই পরিস্থিতিতে মশা জৈবিকভাবে বেঁচে থাকতে বা বংশবৃদ্ধি করতে অক্ষম। আইসল্যান্ডে এমন একটি পোকার অস্ত্বিত্ব আগে থেকেই ছিল, যা দেখতে অনেকটা মশার মতো, কিন্তু আচরণ এবং প্রকৃতিতে একেবারেই আলাদা। এটি কামড়ায় না এবং রোগ ছড়ায় না। তবে বিশেষজ্ঞরা এবারে মশার উপস্থিতির কথা জানিয়ে দিলেন।