আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্যালেস্টাইন অ্যাকশন-কে সম্প্রতি সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করার পর ব্রিটেনে সংগঠনের সমর্থনে সপ্তাহান্তে অনুষ্ঠিত সবচেয়ে বড় বিক্ষোভে ব্যাপক গ্রেপ্তার হয়েছে। রবিবার (১০ আগস্ট) মেট্রোপলিটন পুলিশ আরও কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে আটক করে, ফলে মোট গ্রেপ্তার সংখ্যা ৪৭৪ থেকে বেড়ে ৫০০-র উপরে পৌঁছায়। গ্রেপ্তার হওয়া ৫২২ জনের মধ্যে বেশিরভাগকেই (টেররিজম অ্যাক্টের আওতায়) সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ধরা হয়েছে—অভিযোগ, তারা একটি ‘প্রসক্রাইবড’ অর্থাৎ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ সংগঠনের সমর্থন প্রকাশ করেছেন। বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে অন্যান্য অভিযোগে, যার মধ্যে রয়েছে পুলিশ সদস্যদের উপর হামলা।

এদিকে, রবিবার মধ্য লন্ডনে শত শত প্রো-ইজরায়েল পাল্টা-বিক্ষোভকারীও মিছিল করে। তারা গাজায় এখনও আটক থাকা পণবন্দিদের মুক্তির দাবি জানান এবং মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাতে ইজরায়েলের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। প্যালেস্টাইন সমর্থনকারী বিক্ষোভকারীদের অনেকের হাতে ছিল প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের পক্ষে লেখা প্ল্যাকার্ড। মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, আটকদের গড় বয়স ৫৪ বছর এবং সবচেয়ে বেশি গ্রেপ্তার (১৪৭ জন) হয়েছে ৬০ থেকে ৬৯ বছর বয়সী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে। পুলিশ জানিয়েছে, এটি গত এক দশকের মধ্যে একক অভিযানে সর্বাধিক গ্রেপ্তার।

আরও পড়ুন:  ভারতে পারমাণবিক হামলার হুমকি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের! সতর্ক কেন্দ্র 

অভিযান পরিচালনাকারী ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অ্যাড অ্যাডেলেকান বলেন, “প্রতিবাদের প্রেক্ষাপটে আমাদের ভূমিকা সবসময় একই—ভয় বা পক্ষপাত ছাড়াই আইন প্রয়োগ, শান্তি বজায় রাখা, বিপরীত মতাবলম্বী দলগুলোর সংঘর্ষ ঠেকানো এবং গুরুতর বিশৃঙ্খলা ও সাধারণ মানুষের জীবনে ব্যাঘাত রোধ করা।” ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রসচিব ইয়েভেট কুপার পুলিশের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে দৃঢ় নিরাপত্তা পরামর্শের ভিত্তিতে, কারণ সংগঠনটি অতীতে সহিংস হামলা চালিয়েছে, গুরুতর আহত করেছে এবং ব্যাপক ভাঙচুর করেছে।”

তবে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের প্রধান নির্বাহী সাচা দেশমুখ বলেন, “পার্লামেন্ট স্কোয়ারে প্রতিবাদকারীরা হিংসা  উসকে দিচ্ছিলেন না। তাদের সন্ত্রাসী হিসেবে দেখা পুরোপুরি অযৌক্তিক ও হাস্যকর। বরং সরকারকে এখনই ইজরায়েলের গণহত্যা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত এবং যুক্তরাজ্যের সম্ভাব্য সহযোগিতা বন্ধ করতে হবে।” পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারদের মধ্যে যাদের পরিচয় নিশ্চিত করা গেছে, তাদের জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এই শর্তে যে তারা ভবিষ্যতে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের সমর্থনে কোনও  অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন না। যাদের পরিচয় যাচাই সম্ভব হয়নি এবং অনেকে যারা তা দিতে অস্বীকার করেছেন, তাদের লন্ডনের বিভিন্ন কাস্টডি স্যুটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্যালেস্টাইন অ্যাকশন নিষিদ্ধকরণের আইন ৫ জুলাই কার্যকর হয়েছে। এই সংগঠন বা তার সমর্থনে প্রকাশ্যে অংশগ্রহণ করলে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। ‘ডিফেন্ড আওয়ার জুরিস’ নামক একটি সংগঠনের মুখপাত্র বলেন, “প্যালেস্টাইন অ্যাকশন কিংবা হাতে কার্ডবোর্ডের সাইন ধরা মানুষদের সাধারণ জনগণের জন্য কোনো হুমকি নয়।” এই ঘটনার পর যুক্তরাজ্যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনের প্রশ্ন নতুন করে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে।