আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্বাসঘাতকতা, পরকীয়া, দাম্পত্য কলহের জেরে যখন ভয়াবহ পরিণতির খবর শিরোনাম দখল করছে, সেই আবহেই ভালবাসার টানে বিশ্বরেকর্ড গড়ল এক দম্পতি। টানা ৮৩ বসন্ত পার করল তারা। যুদ্ধের আবহ থেকে অতিমারি, বিশ্বজুড়ে অতি সঙ্কটময় মুহূর্তেও হাতের উপর হাত রেখেই কাটিয়ে দিয়েছেন এতগুলো বছর। একে অপরের সঙ্গে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হননি। বরং এখনও প্রথম দেখার মতোই মুগ্ধতা রয়েছে একে অপরের প্রতি।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, মিয়ামির ওই দম্পতি হল ১০৭ বছরের ইলিয়ানোর ও ১০৮ বছরের লিলি গিটেন্স। কয়েক দশক নয়, দীর্ঘ ৮৩ বছরের দাম্পত্য তাঁদের। একে অপরের ভালবেসেই বিশ্বরেকর্ড গড়লেন তাঁরা। বিশ্বের দীর্ঘতম দাম্পত্যের রেকর্ড তৈরি করলেন ইলিয়ানোর ও লিলি।
LongeviQuest নামের একটি ওয়েবসাইট ১০০ বছর বয়সি বা তার বেশি বয়সি স্বামী-স্ত্রীদের দাম্পত্যের রেকর্ড মজুত রাখে। সেই ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের দীর্ঘতম দাম্পত্য ৮৩ বছরের রেকর্ড রয়েছে। দম্পতি মিয়ামির বাসিন্দা। ১৯৪২ সালে তাঁদের বিয়ের সার্টিফিকেটের রেকর্ড রয়েছে ওয়েবসাইটে।
এর আগে বিশ্বের দীর্ঘতম দাম্পত্যের রেকর্ড ছিল ৮৫ বছরের। ওই দম্পতি ব্রাজিলের বাসিন্দা ছিল। ১০৬ বছরের মানোয়েল অ্যাঞ্জেলিম দিনো ও ১০২ বছরের সৌসা দিনোর মৃত্যুর পর লিলি ও ইলিয়ানোর সেই রেকর্ড দখল করেছেন। এখন বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম দাম্পত্য বহন করছেন লিলি ও ইলিয়ানোর।
প্রেমের পর্ব:
১৯৪১ সালে একটি বাস্কেটবল টুর্নামেন্টে লিলি ও ইলিয়ানোর পরিচয় হয়েছিল। প্রথম দেখাতেই অপার মুগ্ধতা। ক্লার্ক অ্যাটলান্টা ইউনিভার্সিটির হয়ে খেলতে নেমেছিলেন লিলি। সেই টুর্নামেন্টে সাধারণ দর্শক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইলিয়ানোর। সেই টুর্নামেন্টে প্রথম দেখা এবং ক্রমেই প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
বিয়ের পর্ব:
প্রেমের সম্পর্কের কয়েক মাস পরেই বিয়ে। ১৯৪২ সালের ৪ জুন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ইলিয়ানোর ও লিলি। জর্জিয়ায় সেনাবাহিনীর ট্রেনিং থেকে তিনদিনের বিরতি নিয়ে বিয়ের পর্ব সেরে ফেলেন তাঁরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ৯২তম পদাতিক ডিভিশনের হয়ে ইতালিতে ছিলেন লিলি। কিন্তু যুদ্ধের আবহে ফের দেখা হবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন ইলিয়ানোর। আদৌ লিলি বেঁচে ফিরবেন তো, দুশ্চিন্তা গ্রাস করেছিল তাঁকে।
এরপর প্রথমবার গর্ভবতী হয়ে নিউ ইয়র্ক সিটিতে চলে এসেছিলেন লিলি। সেখানে এসেই পরিবারের সঙ্গে দেখা হয়। ইলিয়ানোরকে চিঠি লেখেন। কিন্তু সেই চিঠি সেনাবাহিনীর নিয়মের কারণে তাঁর কাছে পৌঁছয়নি। যুদ্ধের পর নিউ ইয়র্কেই স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করেন তাঁরা। সেখানেই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একসঙ্গে চাকরি পান। শুরু হয় ঘোরাঘুরি। একসঙ্গে বিশ্বভ্রমণ।
লিলি ৬৯ বছর বয়সে ফোর্ডহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবান এডুকেশনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এই সুখী দাম্পত্যের রহস্য জিজ্ঞেস করলে লিলি বলেন, ভালবাসাই তাঁদের সম্পর্কের একমাত্র এবং মূলমন্ত্র। বয়সের ভারে শয্যাশায়ী হলেও ভালবাসা কমেনি একবিন্দুও।
