আজকাল ওয়েবডেস্ক: দক্ষিণ-মধ্য ভিয়েতনামে টানা বৃষ্টিপাত এবং ভয়াবহ বন্যায় অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, বহু স্থানে ঘরবাড়ি পুরোপুরি ডুবে যাওয়ায় মানুষজনকে বাড়ির ছাদ ভেদ করে এবং জানালা ভেঙে নৌকা সহযোগে উদ্ধার করতে হয়েছে।
গত অক্টোবরের শেষ দিক থেকে টানা বর্ষণে ভিয়েতনামের জনপ্রিয় উপকূলীয় পর্যটন অঞ্চলগুলো বারবার প্লাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে ন্যা ট্রাং শহরের বহু ব্লক পুরোপুরি জলের নিচে চলে গেছে। শহরের রাস্তায় সারি সারি গাড়ি ডুবে থাকা অবস্থার ছবি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও এএফপি প্রকাশ করেছে।
ন্যা ট্রাং শহরের ২৪ তলা অ্যাপার্টমেন্টে নিরাপদে অবস্থান করলেও ব্যবসায়ী বুঈ কুয়ক ভিনহ জানিয়েছেন, তাঁর রেস্তোরাঁ ও দোকানঘর প্রায় এক মিটার জলের নিচে। কর্মচারীদের অবস্থা আরও খারাপ, কারণ তাঁদের অনেকের বাড়িতেই দুই মিটার পর্যন্ত জল ঢুকেছে। ভিনহ বলেন, “ফার্নিচারের কথা ভাবছি, কিন্তু এখন কিছু করার উপায় নেই। বৃষ্টি থামেনি, তাই জল দ্রুত নামবে বলে মনে হয় না।”
কেন্দ্রীয় জিয়া লাই ও ডাক লাখ প্রদেশে উদ্ধারকর্মীরা বুধবার নৌকা নিয়ে বাড়ির জানালা ও ছাদ ভেঙে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করে। পরিবেশ মন্ত্রকের তথ্যমতে, সপ্তাহান্তের পর থেকে বন্যায় অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে এবং আরও পাঁচজনকে নিখোঁজ হিসেবে খোঁজা হচ্ছে।
এ পর্যন্ত প্রায় ৪৩ হাজার বাড়িঘর জলে তলিয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি প্রধান সড়ক ভূমিধসের কারণে বন্ধ হয়ে পড়েছে। দা লাত পর্যটনকেন্দ্রের আশেপাশের পার্বত্য এলাকায় মারাত্মক ভূমিধস হয়েছে, যেখানে কিছু স্থানে সপ্তাহান্তের পর থেকে ৬০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
দা লাতের হোটেল মালিক ভু হু সন জানিয়েছেন, ভূমিধসের কারণে শহরে যাওয়ার প্রায় সব রাস্তাই বন্ধ। তিনি বলেন, “পর্যটকেরা আগেই শহর ছেড়ে চলে গেছে। অনেকেই বৃষ্টি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ভ্রমণসূচি বাতিল করেছেন।”
বন্যার কারণে উত্তর-দক্ষিণ সংযোগকারী বেশ কয়েকটি ট্রেন পরিষেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে রাষ্ট্রীয় হ্যানয় রেলওয়ে কর্পোরেশন। বুধবার রাতে জরুরি ফোন নম্বরে অস্বাভাবিক সংখ্যক কল এসেছে, কারণ রাতভর বিভিন্ন এলাকায় জল বেড়ে গেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক হেলিকপ্টার মোতায়েন করে আটকে পড়া মানুষদের সন্ধান শুরু করেছে।
ডাক লাখ প্রদেশের বা নদীর জল দুইটি স্থানে ১৯৯৩ সালের আগের রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। খানহ হোয়া প্রদেশের কাই নদীর জলও সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছে বলে জাতীয় আবহাওয়া ব্যুরো জানিয়েছে।
জাতীয় আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্রের ডেপুটি প্রধান হোয়াং ফুক ল্যাম রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জানান, ভারী বৃষ্টির সঙ্গে পূর্বের জমে থাকা জল যুক্ত হওয়ায় নদীর জল বিপদসীমার অনেক ওপরে উঠে গেছে।
ভিয়েতনামের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ২৭৯ জনের মৃত্যু বা নিখোঁজ এবং দুই বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। প্রতিবছর জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারী বর্ষণ ভিয়েতনামে স্বাভাবিক হলেও বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এখন এসব চরম আবহাওয়া আরও ঘন ঘন ও বিধ্বংসী হয়ে উঠছে।
