আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইরানে নারী অধিকার আন্দোলনের নতুন অধ্যায় যোগ করেছে তেহরান বিমানবন্দরে এক মহিলা। ইরানে মহিলাদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলকষ কিন্তু, স্বাধীনচেতা ওই মহিলা ধর্মীয় গোঁড়ামি মানতে রাজি নন। ছাড়বার পাত্র নন ধর্মগুরুও (আলেম)। হিজাব না পরার কারণে এক আলেম মহিলার সঙ্গে তর্কে জড়ান। তখন ওই প্রতিবাদী মুসলিম ধর্মগুরুর পাগড়ি খুলে নিজের মাথায় হিজাবের মত করে পরেন। এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোড়ন ফেলেছে।

ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, আলেম মহিলাকে বেশ কিছু কথা বলছেন। তারপরই স্বাধীনচেতা ওই নারী রেগে গিয়ে আলেমের দিকে এগিয়ে যান। এর পরই পাগড়ি খুলে নিয়ে তাঁকে বলেন, "তাহলে এখন তোমার সম্মান আছে?" কিছুক্ষণ পরে, তাঁকে তাঁর স্বামীর সন্ধান করতে, তাঁর নাম ধরে ডাকতে এবং দাবি করতে দেখা যায়, "তুমি আমার স্বামীর সঙ্গে কী করেছিলে?"

 

?ref_src=twsrc%5Etfw">January 6, 2025

অনেকেই বিষয়টিকে হিজাবের বিরুদ্ধে নারীদের স্বাধীনচেতা মনোভাবের পরিচয় বলে দাবি করেছেন। যদিও ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের সঙ্গে যুক্ত সংবাদমাধ্যম মাশরেগ নিউজের দাবি, এটা হিজাব নিয়ে কোনও ঘটনা নয়। ওই মহিলা 'মনের সমস্যায় ভুগছেন'।

ভাইরাল ভিডিও-তে অনেকেই প্রতিবাদী মহিলার প্রশংসা করে লিখেছেন, "আমরা বেশ অভূতপূর্ব কিছু প্রত্যক্ষ করছি। নারীরা একটি অনৈতিক, অবৈধ ইসলামী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগের নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা হাত জোড় করে প্রার্থনা করছি যে, এই সাহসী নারীদের প্রতিরোধ সফলভাবে ইসলামী শাসনব্যবস্থার পতন ঘটাবে। আমি তাঁদের অসাধারণ সাহসকে সম্মান জানাই।" কেউ কেউ লিখেছেন, "এমন দিন আসবে যখন ইরানের নারীরা প্রভূত সম্মানিত হবেন।"

ওই প্রতিবাদী মহিলাকে অল্প সময়ের জন্য আটক করা হয়েছিল। তবে অভিযোগকারীদের সম্মতিতে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।

এ ঘটনাটি এমন সময়ে ঘটেছে, যখন ইরানে নারীদের হিজাব পরা নিয়ে নানা বিতর্ক সামনে আসছে। বিশেষ করে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে মাহসা আমিনির পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর পর এই আন্দোলন আরও তীব্র হয়েছে। সরকার নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব আইন অমান্যকারীদের দমন জোরদার করেছে। এমনকী বিমানবন্দর-সহ জনসমাগমস্থলে কঠোর নজরদারি চালানো হচ্ছে।

ইরানের সরকারি হিজাব বিরোধী প্রচার বা কাজকে 'মানসিক রোগ' হিসেবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে মরিয়া। ২০২৩ সালের নভেম্বরে তেহরানের আজাদ ইউনিভার্সিটির একজন ছাত্রী পোশাক খোলার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে নারীদের মুক্তির প্রতীক হয়ে ওঠেন। সরকারি প্রচারণায় তাঁকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দাবি করা হলেও চারটি ইরানি মনোবিজ্ঞান ও মনোরোগবিদ্যা সংগঠন এর নিন্দা জানিয়েছিল।

গত দু'বছরে হাজার হাজার নারী বাধ্যতামূলক হিজাব না পরার কারণে গ্রেপ্তার, জরিমানা ও বিচার প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ইরানের বিমানবন্দর পুলিশপ্রধান মোহসেন আঘিলি ঘোষণা করেন, হিজাব না পরা নারীদের বিমানবন্দর ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। এর আগে মাশহাদ ও ফার্স প্রদেশের বিমানবন্দরগুলোতেও একই নিয়ম লাগু করতে দেখা গিয়েছিল।

গত বছরের জুলাই মাসে হিজাব আইন না মানার অভিযোগে তেহরানের তুর্কি এয়ারলাইনসের অফিস সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়। মানবাধিকার সংস্থা এইচআরএনএ রিপোর্ট অনুসারে, গত বছর ৩০ হাজারের বেশি নারীর বিরুদ্ধে বাধ্যতামূলক হিজাব আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে হয়রানি করা হয়েছে।
ইরানি সরকার সম্প্রতি  'চরিত্র ও হিজাব আইন' কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে। এটি নারীদের স্বাধীনতার ওপর আরও বিধিনিষেধ আরোপ করবে। তবে আইনটি কার্যকর করার ক্ষেত্রে গণবিরোধিতার আশঙ্কায় সরকার এখন সতর্ক।