আজকাল ওয়েবডেস্ক: হাইড্রোজেনের পরিমাণ আগের তুলনায় প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। এই বৃদ্ধি সরাসরি কার্বন-ডাই–অক্সাইডের মতো তাপ আটকে রাখে না। কিন্তু হাইড্রোজেন বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক গঠনকে এমনভাবে প্রভাবিত করে যে, অন্য গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর কার্যকারিতা বেড়ে গিয়ে পৃথিবী আরও উষ্ণ হয়।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বাতাসে হাইড্রোজেনের একটি নতুন দীর্ঘমেয়াদি রেকর্ড তৈরি করেছেন, যা প্রায় ১,১০০ বছরের ডেটা জুড়ে রেখেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, ১৮০০ সালের শুরুর দিকে হাইড্রোজেনের ঘনত্ব ছিল প্রায় ২৮০ পার্টস পার বিলিয়ন, আর এখন তা প্রায় ৫৩০ পার্টস পার বিলিয়ন ছুঁয়েছে।
আরও পড়ুন: চলতি বছর যেন সোনায় সোহাগা, এই তিনটি মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগ করলেই মিলবে দুর্দান্ত ফল
এই বাড়তি ধারা সরাসরি জ্বালানি ব্যবহারের বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত। কয়লা, তেল, গ্যাস বা এমনকি বায়োমাস পুড়লেও উপ-উৎপাদন হিসেবে হাইড্রোজেন নির্গত হয়। হাইড্রোজেন অতি ক্ষুদ্র ও অস্থির একটি গ্যাস। বরফকণার মধ্যে থাকা হাইড্রোজেন সহজেই বেরিয়ে যায় যখন সেগুলো মেরুর ড্রিল সাইট থেকে ল্যাবে নিয়ে আসা হয়। তাই এতদিন পুরনো রেকর্ডগুলো সঠিক ছিল না।
এবার বিজ্ঞানীরা সরাসরি গ্রিনল্যান্ডের বরফের ওপরেই যন্ত্রপাতি বসিয়ে পরীক্ষা করেছেন। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, ইরভাইনের গবেষক জন প্যাটারসন জানিয়েছেন, বরফের নমুনা বের করার পরপরই সেগুলোকে পরিষ্কার করে সিল করে দেওয়া হয়েছিল, যাতে সঙ্গে সঙ্গে গলনকক্ষে বিশ্লেষণ করা যায়। এই নতুন পদ্ধতিতে তারা শত বছরের সীমারেখা ভেঙে অনেক দীর্ঘ সময়ের রেকর্ড পেলেন।
ডেটাতে দেখা যাচ্ছে, শুধু বৃদ্ধি নয়, কিছু সময় পতনও ঘটেছে। যেমন ১৬শ থেকে ১৯শ শতক পর্যন্ত “লিটল আইস এজ”-এর সময় হাইড্রোজেন প্রায় ১৬ শতাংশ কমে গিয়েছিল। বন্যাগুলির হ্রাস এর পুরো কারণ নয়, বরং প্রকৃতির জটিল জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়াই মূল নিয়ন্ত্রণ করেছে, যা এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, হাইড্রোজেন নিজে তাপ আটকে রাখে না, তবে পরোক্ষভাবে জলবায়ুকে উষ্ণ করে। বাতাসে হাইড্রোজেন মিথেনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে হাইড্রক্সিল র্যা ডিক্যালের জন্য—যা পৃথিবীর প্রাকৃতিক “পরিষ্কারক” হিসেবে কাজ করে। বেশি হাইড্রোজেন থাকলে হাইড্রক্সিল কম মেলে, ফলে মিথেন ভাঙতে সময় বেশি লাগে এবং এর উষ্ণায়ন প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয়।
বর্তমানে অ্যাটমোস্ফিয়ারে হাইড্রোজেনের মাত্রা প্রায় ০.৫ পার্টস পার মিলিয়ন। অনুমান করা হচ্ছে, এটি মানুষের তৈরি গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রায় ২ শতাংশের জন্য দায়ী। শিল্পবিপ্লব-পরবর্তী সময়ে জ্বালানি পোড়ানো, যানবাহনের ধোঁয়া ও শিল্পকারখানার নির্গমন থেকেই এই বৃদ্ধির প্রধান উৎস।
এখন “হাইড্রোজেন ইকোনমি” নিয়ে নতুন আলোচনা হচ্ছে। সবুজ হাইড্রোজেন জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হতে পারে, বিশেষ করে যেখানে বিদ্যুতায়ন কঠিন। কিন্তু যদি উৎপাদন ও সরবরাহ প্রক্রিয়ায় হাইড্রোজেন লিক হয়, তবে তা মিথেন সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলবে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালেক্স আর্চিবাল্ড সতর্ক করেছেন যে, ভবিষ্যতের হাইড্রোজেন-ভিত্তিক ব্যবস্থায় লিক প্রতিরোধ করাই হবে প্রধান চ্যালেঞ্জ।
তবে তুলনা করলে দেখা যায়, জীবাশ্ম জ্বালানি সরাসরি বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই–অক্সাইড নির্গত করে, যেখানে হাইড্রোজেনের পরোক্ষ প্রভাব তুলনায় অনেক কম। তাই বিজ্ঞানীরা বলছেন, হাইড্রোজেনকে ভয় পেয়ে এড়িয়ে যাওয়া নয়, বরং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ যেখানে সত্যিকারের কার্বন হ্রাস সম্ভব, সেখানে হাইড্রোজেন ব্যবহার করতে হবে এবং প্রযুক্তি এমনভাবে গড়তে হবে যেন লিক ন্যূনতম হয়। হাইড্রোজেন কোনও নিখুঁত সমাধান নয়, কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে এটি বড় সম্ভাবনা বহন করছে—শর্ত হল এর ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনায় সতর্কতা অবলম্বন করা।
