আজকাল ওয়েবডেস্ক: হংকংয়ের নিউ টেরিটোরিজ অঞ্চলের তাই পো জেলায় এক আবাসন কমপ্লেক্সে বিধ্বংসী আগুনে কমপক্ষে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার শহরের ফায়ার সার্ভিস বিভাগ জানিয়েছে, আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশাপাশি থাকা সাতটি উঁচু বহুতল আবাসিক ভবনে। মৃতদের মধ্যে একজন দমকলকর্মীও রয়েছেন।


ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানায়, ঘটনাস্থলেই ৯ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর আরও ৪ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়। এছাড়া অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। দমকলকর্মী অ্যান্ডি ইয়াং জানান, নিহত দমকলকর্মীর সহকর্মী আরেক জন তীব্র গরমে জ্ঞান হারিয়ে চিকিৎসাধীন।


এই ভয়াবহ আগুনের পর প্রায় ৭০০ বাসিন্দাকে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আগুন লাগার পরপরই ভবনের বিভিন্ন তলা থেকে বহু মানুষ আটকা পড়েছে বলে ফোন আসে, যদিও তাঁদের সঠিক সংখ্যা বা অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়নি।


বাঁশের মাচা ও নেটিং ঘিরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আগুন
দমকল জানিয়েছে, বিকেলের দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর সন্ধ্যা নামতেই আগুনের তীব্রতা এতটাই বাড়ে যে তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে ভবনের বাইরের দিকে থাকা বাঁশের স্ক্যাফোল্ডিং ও নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত নেটিং–এ। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে এই বাঁশের কাঠামোকেই চিহ্নিত করা হয়েছে।


ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পাশাপাশি থাকা একাধিক বহুতলের জানালা থেকে আগুনের লেলিহান শিখা ও কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে। দমকলের ল্যাডার ট্রাকের ওপর থেকে জল ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন কর্মীরা।


অগ্নিকাণ্ডের পর রাত নামতেই দমকল বিভাগ ঘটনাটিকে লেভেল–৫ অ্যালার্ম, অর্থাৎ সর্বোচ্চ সতর্কতা স্তরে উন্নীত করে। মধ্যরাতের পরও আগুন জ্বলতে থাকে।


ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আগুন নেভানোর জন্য ১২৮টি ফায়ার ট্রাক এবং ৫৭টি অ্যাম্বুল্যান্স মোতায়েন করা হয়েছে—গত কয়েক বছরের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ উদ্ধার অভিযান।


স্থানীয় বাসিন্দা, “আমি তো আমার ফ্ল্যাট ফিরে পাব কিনা তাও জানি না। সম্পূর্ণ ভবনটাকে আগুনে পুড়তে দেখা—ভীষণ অসহায় লাগছিল।” এই আবাসন প্রকল্পে মোট ৮টি ব্লক, প্রায় ২,০০০টি ফ্ল্যাট এবং প্রায় ৪,৮০০ বাসিন্দা রয়েছে বলে সরকারি রেকর্ডে উল্লেখ রয়েছে।


হংকংয়ে নির্মাণ ও সংস্কার কাজে বাঁশের স্ক্যাফোল্ডিং বহুদিনের প্রচলিত প্রযুক্তি। তবে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে সরকার চলতি বছর জানিয়েছিল, সরকারি প্রকল্পে ধীরে ধীরে এই পদ্ধতি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হবে। তাই পো-র অগ্নিকাণ্ড সেই উদ্বেগকেই আরও বাড়িয়ে দিল।