আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্বের সবচেয়ে বড়, লম্বা ও ভারী জেলিফিশ প্রজাতির এক অপূর্ব ভিডিও সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, যা মুগ্ধ করেছে লক্ষ লক্ষ দর্শককে। এই চমকপ্রদ ভিডিওটি করেছেন আন্ডারওয়াটার ভিডিওগ্রাফার জন রনি। তিনি শেয়ার করেছেন এক বিশাল আকারের লায়ন’স মেন জেলিফিশ-এর দৃশ্য, যা তিনি করেছিলেন সালিশ সাগরে। উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত এক অভ্যন্তরীণ সমুদ্র, যা প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত।
রনি তার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেছেন, সেদিন তিনি মূলত স্কুইড ও ছোট জেলিফিশের কিছু ভিডিও করার আশা করেছিলেন। কিন্তু ডুব দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তিনি জলের ভেতর একটি অস্বাভাবিক দৃশ্য দেখতে পান। একটি লম্বা, চিকন টেন্টাকল বা শুঁড় যেন তার মাথার উপরে ভেসে যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রথমে শুঁড়টির শেষ দেখা যাচ্ছিল না, তাই কৌতূহলবশত তিনি সেটি অনুসরণ করতে শুরু করেন। প্রায় এক মিনিটেরও বেশি সময় ধরে তিনি শুঁড়টির পিছু নেন, এবং শেষে দেখা পান এক বিশাল আকৃতির লায়ন’স মেন জেলিফিশের।
এই প্রজাতির জেলিফিশ সমুদ্রজগতে এক রাক্ষুসে প্রাণী হিসেবে পরিচিত। জন রনি জানান, এখন পর্যন্ত রেকর্ড হওয়া সবচেয়ে বড় লায়ন’স মেন জেলিফিশের ঘণ্টার ব্যাস ছিল প্রায় ৭ ফুট, আর এর টেন্টাকল বা শুঁড়ের দৈর্ঘ্য ছিল ১২০ ফুট পর্যন্ত যা প্রায় এক ফুটবল মাঠের সমান। স্মিথসোনিয়ান ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম এবং গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী, এই প্রজাতির জেলিফিশের ওজন ১ টন বা তারও বেশি হতে পারে।
?utm_source=ig_embed&utm_campaign=loading" target="_blank" rel="noopener">A post shared by John Roney (@roneydives)
রনির শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, জেলিফিশটির মুগ্ধকর রঙ এবং চলাচল। এর ফ্যাকাশে, স্বচ্ছ ঘণ্টা আকৃতির দেহ জলের ভেতর দুলছে, আর নিচের দিকে ফুটে উঠছে কমলা, বেগুনি ও লালচে রঙের মনোমুগ্ধকর স্তর। ক্লোজ-আপ দৃশ্যে দেখা যায়, এর শুঁড়গুলো স্রোতের সঙ্গে দোল খাচ্ছে, যেন কোনো ভিনগ্রহের জীব ভেসে বেড়াচ্ছে গভীর সমুদ্রে।
রনি জানান, ভিডিওটি তিনি সূর্যাস্তের পর করেছিলেন, যখন সাগরের জল ছিল একেবারে নীরব ও অন্ধকারে আচ্ছন্ন। তিনি বলেন, এই জেলিফিশেরা তাদের শুঁড় ব্যবহার করে অন্যান্য মাছ, জেলিফিশ এমনকি ক্ষুদ্র প্রাণীকেও ধরে ফেলে। তাদের শুঁড়ে থাকে শক্তিশালী স্টিং সেলস, যা দিয়ে তারা শিকারকে অবশ করে ফেলে। এরপর ধীরে ধীরে শিকারটিকে টেনে নেয় দেহের কেন্দ্রে, যেখানে তা হজম হয়।
রনি তার পোস্টে আরও লিখেছেন, “এরা সত্যিই সমুদ্রের শিল্পকর্ম। তাদের গভীর কমলা, বেগুনি ও লালচে আভা ক্যামেরায় ধরা পড়লে একেবারে স্বপ্নের মতো লাগে। কিন্তু সাবধান, এই জেলিফিশকে কখনো ছোঁয়ার চেষ্টা করবেন না, কারণ তাদের বিষাক্ত টেন্টাকল ভয়ানক ক্ষতি করতে পারে।”
এই ভিডিওটি প্রকাশের পরই তা দ্রুত ভাইরাল হয়ে পড়ে। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, এমন দৃশ্য আগে কখনো দেখেননি। কেউ লিখেছেন, “প্রকৃতির এই রূপ যেন অবিশ্বাস্য!” আবার কেউ বলেছেন, “এমন সৌন্দর্য একসঙ্গে ভয় ও মুগ্ধতা জাগায়।”
সমুদ্রবিজ্ঞানীরা বলেন, লায়ন’স মেন জেলিফিশ শুধু সৌন্দর্যেই নয়, ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারা ক্ষুদ্র মাছ ও প্ল্যাঙ্কটন খেয়ে সমুদ্রজ জীববৈচিত্র্য নিয়ন্ত্রণে রাখে।
জন রনির এই ভিডিও আমাদের আবার মনে করিয়ে দেয়—গভীর সমুদ্র এখনো রহস্যে ভরা এক জগৎ, যেখানে প্রতিটি প্রাণীর মধ্যে লুকিয়ে আছে বিস্ময়কর সৌন্দর্য ও শক্তি।