আজকাল ওয়েবডেস্ক: জার্মানির স্টুটগার্ট শহরের একটি অদ্ভুত মামলাকে কেন্দ্র করে এখন বিদেশি সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। মামলাটি এমন এক দম্পতিকে ঘিরে, যেখানে স্বামী বন্ধ্যাত্বের কারণে স্ত্রীকে গর্ভধারণ করানোর উদ্দেশ্যে প্রতিবেশীকে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার জন্য টাকা দিয়ে নিযুক্ত করেছিলেন। ঘটনাটি রীতিমতো এক বাস্তব জীবনের পরিহাস—যেখানে চিকিৎসা প্রতিবেদন, প্রতারণা, দাম্পত্য অবিশ্বাস এবং আদালতের লড়াই সবই জড়িয়ে রয়েছে।
ঘটনার শুরু ২৯ বছর বয়সী দেমেত্রিউস সুলোপোলোস এবং তার স্ত্রী ট্রাউটেনকে ঘিরে। বহুদিন চেষ্টা করেও তারা সন্তানসম্ভবা হতে পারছিলেন না। চিকিৎসকের পরামর্শে জানা যায়, দেমেত্রিউস অক্ষম অর্থাৎ সন্তান ধারণের সক্ষমতা তার নেই। এরপর বিকল্প পথ খুঁজতে গিয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেন প্রতিবেশী ফ্রাংক মাউসকে ২,০০০ ইউরোর বিনিময়ে এই কাজের দায়িত্ব দেওয়ার।
৩৪ বছর বয়সী মাউসের স্ত্রী এবং দুটি সন্তান রয়েছে। তাই দম্পতি ভেবেছিলেন, তিনি নিশ্চয়ই সক্ষম হবেন। মাউসও অর্থের বিনিময়ে এই কাজ করতে সম্মত হন, যদিও তার স্ত্রী আপত্তি জানিয়েছিলেন। ছয় মাস ধরে সপ্তাহে তিনবার করে মোট ৭২ বার মাউস ট্রাউটেনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। মাউস নাকি স্ত্রীকে বলেছিলেন—“আমি আনন্দের জন্য নয়, শুধু টাকার জন্যই করছি।”
কিন্তু ছয় মাস পরেও ট্রাউটেন গর্ভবতী না হওয়ায় দেমেত্রিউস সন্দিহান হয়ে ওঠেন এবং মাউসকে মেডিক্যাল পরীক্ষা করাতে বাধ্য করেন। ফলাফল ছিল সকলের জন্যই চাঞ্চল্যকর—মাউসও বন্ধ্যা, অর্থাৎ তারও সন্তান ধারণ করানোর ক্ষমতা নেই। চিকিৎসকের প্রতিবেদন প্রকাশের পর সবচেয়ে বেশি বিস্ময়কর ছিল যে, মাউসের স্ত্রী স্বীকার করেন—তাদের দুই সন্তানের বাবা আসলে মাউস নন, অন্য কেউ।
এরপর দেমেত্রিউস আদালতের দ্বারস্থ হন এবং অভিযোগ তোলেন যে, মাউস দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন, তাই তাকে টাকা ফেরত দিতে হবে। কিন্তু মাউস দাবি করেন, তিনি শুধুমাত্র চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সফল করার নয়। তার বক্তব্য—তিনি সৎভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, ব্যর্থতার জন্য তিনি দায়ী নন।
মামলাটি এখন জার্মানির ‘Honest Services Law’–এর আওতায় বিচারাধীন। আদালত এখনও রায় দেয়নি, তবে বিষয়টি জনসমক্ষে আসার পর জার্মানিতে হাস্যরস, নৈতিক বিতর্ক এবং আইনি বিশ্লেষণের ঝড় উঠেছে। অনেকে বলছেন, “এটি নেহাতই ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়, আদালতের নয়।” আবার কেউ কেউ মত দিচ্ছেন, “যেহেতু চুক্তি হয়েছে ও অর্থ লেনদেন হয়েছে, তাই এটি আইনগত প্রশ্ন।”
এই মামলাটি জার্মানিতে ব্যক্তিগত নৈতিকতা, আইনগত দায়বদ্ধতা এবং চিকিৎসাগত সত্যতার বিষয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এদিকে, জার্মানি একই সময়ে আরেকটি বিতর্কিত বিষয়ে—ধর্মীয় খৎনা (circumcision)—নিয়ে বিচার ও জনমত বিভক্তির মুখে পড়েছে। ফলে দেশটিতে ব্যক্তি অধিকার, চিকিৎসা নৈতিকতা এবং আইনের সীমা নিয়ে আলোচনা আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।
মামলার রায় কবে ঘোষণা হবে তা এখনও জানা যায়নি। তবে একটি কথা স্পষ্ট—ঘটনাটি শুধু পারিবারিক অস্থিরতা নয়, বরং আধুনিক সমাজে দেহ, সম্পর্ক, বিজ্ঞান ও আইনের জটিল সম্পর্কের একটি বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
