আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশাল প্রকল্পের জন্য চীন যে বিশ্বজুড়ে পরিচিত, তা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ, সবচেয়ে বড় হাই-স্পিড রেল নেটওয়ার্ক, বৃহত্তম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র—সবই রয়েছে চীনে। এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পও চীনের দখলে। অতীতের দিকেও তাকালেও দেখা যায়, বৃহত্তম প্রাচীন স্থাপন শিল্পের তালিকাতেও চীনের নাম শীর্ষে। এই বিশাল নির্মাণযজ্ঞের পাশাপাশি চীন দীর্ঘদিন ধরেই “সবুজায়ন”-এর দিকেও সমান গুরুত্ব দিয়ে এসেছে।
সেই ভাবনা থেকেই ১৯৭৮ সালে শুরু হয় থ্রি-নর্থ শেল্টারবেল্ট প্রকল্প, যা পরিচিত “গ্রেট গ্রিন ওয়াল” নামে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল মাটির ক্ষয় রোধ করা এবং মরুকরণের ফলে সৃষ্ট ধূলিঝড় কমানো। এই প্রকল্পটি অবশেষে গত বছর সম্পূর্ণ হয়েছে। প্রায় ১ লক্ষ ১৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে গাছ লাগিয়ে চীন তাদের বনভূমির পরিমাণ ১৯৪৯ সালের ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০২৪ সালে প্রায় ২৫ শতাংশে নিয়ে গেছে।
আর্থ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাটি করেছেন তিয়ানজিন বিশ্ববিদ্যালয়, বেইজিংয়ের চায়না এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি এবং নেদারল্যান্ডসের উটরেখ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। তাঁদের গবেষণা অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে অতিরিক্ত সবুজায়নের ফলে পূর্বাঞ্চলের মৌসুমি অঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিমের শুষ্ক অঞ্চলে জলসম্পদ কমে গেছে। এই দুই অঞ্চল মিলিয়ে চীনের মোট ভূমির প্রায় ৭৪ শতাংশ জুড়ে রয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, গ্রেট গ্রিন ওয়ালের পাশাপাশি ১৯৯৯ সালে শুরু হওয়া গ্রেইন ফর গ্রিন প্রোগ্রাম ও ন্যাচারাল ফরেস্ট প্রোটেকশন প্রোগ্রাম-এর মতো উদ্যোগগুলিও রয়েছে।উদ্ভিদ থেকে জলীয় বাষ্প নির্গমন এবং মাটি থেকে জল বাষ্পীভবনের সম্মিলিত প্রক্রিয়াকে বোঝায়। এর ফলে বৃষ্টিপাতের ধরনও বদলে গেছে।
গবেষকদের মতে, এই পরিবর্তনের কারণে বেশি আর্দ্রতা সরে গেছে তিব্বত মালভূমির দিকে, যেখানে জল বেড়েছে। কিন্তু এর উল্টো প্রভাব পড়েছে পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম চীনে, বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে জলঘাটতি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। আরও দেখা গেছে, তৃণভূমি থেকে বনভূমিতে রূপান্তর ও বৃষ্টিপাত বাড়ালেও, সামগ্রিক জলের হার কমিয়েছে।
সমস্যা আরও গুরুতর কারণ চীনের উত্তরাঞ্চলে দেশের প্রায় ৪৬ শতাংশ মানুষ বাস করে এবং সেখানেই রয়েছে অধিকাংশ আবাদযোগ্য জমি, অথচ সেই অঞ্চলে রয়েছে মোট জলসম্পদের মাত্র ২০ শতাংশ। গবেষকদের মতে, ভবিষ্যতে বনায়ন ও ভূমি ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করার সময় এই পরিবর্তিত জলচক্রের প্রভাব অবশ্যই চিন্তা করতে হবে।
