আজকাল ওয়েবডেস্ক: চীন বৃহস্পতিবার বৈদ্যুতিক গাড়ি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটারি প্রযুক্তির রপ্তানিতে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এটি বিশ্বের সরবরাহ শৃঙ্খলে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, লিথিয়াম ব্যাটারি তৈরিতে ব্যবহৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির রপ্তানি সীমিত করা হবে। এই ব্যাটারিগুলোই বিশ্বের বেশিরভাগ ইলেকট্রিক যানবাহন (EV)-এর মূল শক্তির উৎস।
চীন বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ রেয়ার আর্থ উপাদান প্রক্রিয়াজাত করে, যা স্মার্টফোন, সোলার প্যানেল, চিপ এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স তৈরির জন্য অপরিহার্য। এতদিন ধরে এই রেয়ার আর্থ উপাদানগুলির রপ্তানিতে আংশিক সীমাবদ্ধতা ছিল, তবে বৃহস্পতিবার থেকে চীন আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন কঠোর নীতি কার্যকর করেছে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশি কোম্পানিগুলোকে এমনকি অল্প পরিমাণ রেয়ার আর্থ রপ্তানির ক্ষেত্রেও চীনা সরকারের অনুমতি নিতে হবে। তাদের জানাতে হবে কেন এবং কী উদ্দেশ্যে তারা এই উপকরণ আমদানি করতে চায়। একইসঙ্গে, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং গ্রাফাইট রপ্তানির ওপরও একই ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। গ্রাফাইট হল ব্যাটারি উৎপাদনে অপরিহার্য একটি কাঁচামাল, যার বড় অংশই চীনে উৎপাদিত হয়।
আরও পড়ুন: এই আটটি ফান্ডে বিনিয়োগ করলেই মিলবে কর ছাড়, দেখে নিন একঝলকে
চীন বলছে, এই নতুন বিধিনিষেধ জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, এর মূল লক্ষ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র — চীনের বাণিজ্য ও কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী — যার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে নতুন বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নতুন এই রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা শিল্প ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিপ নির্মাতা কোম্পানির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে।
চীনা সরকার আরও জানিয়েছে, এখন থেকে রেয়ার আর্থ খনন, প্রক্রিয়াকরণ, এবং ম্যাগনেট তৈরির প্রযুক্তিও সরকারের অনুমতি ছাড়া রপ্তানি করা যাবে না। চীনা কোম্পানিগুলো বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে এই খাতে কাজ করতে চাইলে, তাতেও সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। নতুন বিধিনিষেধের আওতায় পড়ছে খনন, গলন, বিভাজন, চৌম্বকীয় উপকরণ উৎপাদন ও রেয়ার আর্থ পুনর্ব্যবহার কার্যক্রমও।
এই নিয়ম কার্যকর হচ্ছে এমন এক সময়ে, যখন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এই মাসের শেষের দিকে। নিয়ন্ত্রণের আওতায় এসেছে লিথিয়াম আয়রন ফসফেট ও লিথিয়াম ম্যাঙ্গানিজ আয়রন ফসফেট ব্যাটারির ক্যাথোড তৈরির প্রযুক্তিও।
ভারত বর্তমানে তার লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির প্রায় পুরো উপকরণ — যেমন ক্যাথোড, যন্ত্রপাতি ও মেশিনারি — চীন থেকে আমদানি করে। ফলে এই নতুন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ভারতের ইলেকট্রিক যান (EV) এবং সবুজ জ্বালানি মিশন-এর অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। একইসঙ্গে, সোলার প্যানেল উৎপাদন ও ইলেকট্রনিক পণ্য তৈরিতেও সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
রেয়ার আর্থ উপাদান শুধু ব্যাটারিতেই নয়, লেজার, কার হেডলাইট, স্পার্ক প্লাগ, চিপ, ক্যাপাসিটর ও স্মার্টফোন তৈরিতেও অপরিহার্য। ফলে ভারতের প্রযুক্তি, গাড়ি ও ইলেকট্রনিক্স খাতে একযোগে চাপ পড়বে।
ভারতের ইলেকট্রিক মোবিলিটি পরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশটি আগামী বছরগুলোতে অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন (ICE) গাড়ির পরিবর্তে লিথিয়াম ব্যাটারি চালিত EV ব্যবহারে জোর দিচ্ছে। টাটা ও মাহিন্দ্রার মতো দেশীয় নির্মাতারা ইতিমধ্যেই দেশে ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরি করছে। কিন্তু চীনের নতুন নীতির কারণে ব্যাটারি উপকরণের ঘাটতি দেখা দিলে উৎপাদনে বিলম্ব ও খরচ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিওডিমিয়াম-আয়রন-বোরন নামের একটি রেয়ার আর্থ ম্যাগনেট বৈদ্যুতিক গাড়ির মোটর, পাওয়ার স্টিয়ারিং, ওয়াইপার ও ব্রেকিং সিস্টেম তৈরিতে অপরিহার্য। চীনের নতুন নিয়ন্ত্রণে এই উপকরণগুলির সরবরাহও বিঘ্নিত হতে পারে, যা শুধু ইলেকট্রিক নয়, প্রচলিত গাড়ি শিল্পকেও প্রভাবিত করবে।
