আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্বের সর্ববৃহৎ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী দেশ চীন ঘোষণা করেছে, তারা স্বেচ্ছায় ২০৩৫ সালের মধ্যে অর্থনীতির সর্বমোট নিঃসরণ ৭% থেকে ১০% পর্যন্ত হ্রাস করবে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের চলতি অধিবেশনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভার্চুয়াল ভাষণে এই প্রতিশ্রুতি দেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস এবং ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার যৌথ সঞ্চালনায় এই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। লুলার দেশ ব্রাজিল আসন্ন নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য COP30 জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজক। শি জিনপিংয়ের এই প্রতিশ্রুতি জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক  প্রয়াসে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, বিশ্ব  উষ্ণতা শিল্পপূর্ব যুগের তুলনায় সর্বোচ্চ ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে, যেখানে প্রতিটি দেশ স্বেচ্ছায় নির্ধারিত নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্য (NDCs) জমা দেয়।

শি বলেন, “ন্যায্যতা ও সমতা বজায় রাখতে হবে, এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির উন্নয়নের অধিকারকে পূর্ণ সম্মান জানাতে হবে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, ধনী দেশগুলির উচিত নিঃসরণ হ্রাসে নেতৃত্ব নেওয়া এবং প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তায় দরিদ্র দেশগুলিকে সহযোগিতা করা।

“জলবায়ু-সহনশীল সমাজ” গড়ে তুলতে চীন ২০৩৫ সালের মধ্যে মোট জ্বালানি ব্যবহারে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভাগ ৩০% এর ওপরে নিয়ে যেতে চায়। ২০২০ সালের তুলনায় ছয় গুণ বেশি সৌর ও বায়ুশক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নবীকরণযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে ৩,৬০০ গিগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বৈদ্যুতিক গাড়িকে মূলধারায় আনার পাশাপাশি বনভূমি বৃদ্ধি ও জাতীয় কার্বন নির্গমন বাণিজ্য প্রকল্প সম্প্রসারণের অঙ্গীকারও করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে ভারতকে তীব্র আক্রমণ করলেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস

ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপই সর্বাধিক কার্বন নিঃসরণকারী। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলিকে চাপ দিলেও, পশ্চিমী  দেশগুলির অনেকেই প্যারিস চুক্তির অঙ্গীকার যথাযথভাবে পালন করেনি। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো চুক্তি থেকেই সরে এসেছিলেন।
শি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “উন্নত দেশগুলির উচিত নিঃসরণ হ্রাসে পথ দেখানো এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিকে পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদান করা।”

চীনের এই ঘোষণাকে জাতিসংঘে সমর্থন জানিয়েছেন মহাসচিব গুতেরেস। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা বলেন, তাঁর দেশ ২০৩৫ সালের মধ্যে ৫৯% থেকে ৬৭% পর্যন্ত নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকার করেছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করবে। এছাড়া, বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী জোহান রকস্ট্রোম ও ক্যাথরিন হেও সম্মেলনে সতর্ক করে বলেছেন, অবিলম্বে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসা এবং বন রক্ষা করা ছাড়া জলবায়ু বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব নয়।

চীনের এই স্বেচ্ছা ঘোষণায় জলবায়ু ইস্যুতে নতুন করে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হয়েছে। আগামী COP30 সম্মেলনকে সামনে রেখে বড় দেশগুলির কাছ থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ আশা করছে আন্তর্জাতিক মহল। প্রশ্ন এখন একটাই— আন্তর্জাতিক শক্তিগুলি কি সত্যিই প্যারিস চুক্তির প্রতিশ্রুতিকে কাজে পরিণত করবে, নাকি জলবায়ু বিপর্যয়ের ঘড়ি আরও দ্রুত এগিয়ে চলবে?