আজকাল ওয়েবডেস্ক: কনজারভেটিভ নেতা এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের 'মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন' আন্দোলনের প্রবল সমর্থক চার্লি কার্ককে বুধবার গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি যখন ইউটাহ ভ্যালি ইউনিভার্সিটিতে হাজারো দর্শকের সামনে বক্তব্য রাখছিলেন, তখনই হামলাটি ঘটে। মুহূর্তটি ক্যামেরায় ধরা পড়ে এবং ভিড়ের মধ্যে আতঙ্ক, চিৎকার ও দৌড়াদৌড়ি ছড়িয়ে পড়ে।
মাত্র ৩১ বছর বয়সী এই নেতা 'টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ'-এর প্রতিষ্ঠাতা। ঘটনার সময় তিনি বন্দুক নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তর দিতে শুরু করেছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে এক তীব্র শব্দ শোনা যায়। কার্কের গলায় রক্তক্ষরণ শুরু হয়। কয়েক সেকেন্ড তিনি মাইক্রোফোন আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করেন, তারপর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
“নিচে শুয়ে পড়ো! নিচে শুয়ে পড়ো!” একজন দর্শক চিৎকার করে ওঠেন। সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে বিশৃঙ্খলা। “দৌড়াও! পালাও!” আরেকজন চেঁচিয়ে ওঠেন। প্রায় ৩,০০০ জনেরও বেশি দর্শক এদিক-সেদিক ছুটতে শুরু করে। কেউ মাটিতে পিছলে পড়ে যায়, কেউ আবার বেঞ্চ টপকে পালানোর চেষ্টা করে।
GRAPHIC CONTENT: The moment Charlie Kirk was shot at Utah Valley University pic.twitter.com/6HQLANItfL
— Breaking911 (@Breaking911)Tweet by @Breaking911
ইউটাহ ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক সেফটির কমিশনার বউ ম্যাসন জানান, হামলাকারী মাত্র একবার গুলি চালিয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে এটি ছিল “একজন ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে চালানো হামলা।” গুলি সম্ভবত ছাদের দিক থেকে ছোঁড়া হয়েছিল বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। প্রথমে দুজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হলেও পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আসল হামলাকারীর খোঁজে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চলছে।
ঘটনার কয়েক মিনিটের মধ্যেই গুলির ভয়ঙ্কর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যেখানে দেখা যায় কার্ক তার ক্ষত চেপে ধরেছেন, সেটি মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যেই এক্স-এ ১ কোটি ১০ লাখেরও বেশি ভিউ পায়। এরপর হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
ভিডিওগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ইনস্টাগ্রাম, থ্রেডস, ইউটিউব ও টেলিগ্রামে, যেখানে সেগুলোর সঙ্গে তার পুরোনো ভাষণ ও আর্কাইভ ফুটেজও জুড়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ফের একবার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হলেন ইলন মাস্ক, এই নিয়ে কতবার
এই হত্যাকাণ্ডে রাজনৈতিক মহল জুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে আখ্যা দেন “আমেরিকার জন্য এক অন্ধকার মুহূর্ত” বলে। তিনি রাজনৈতিক হিংসা দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, “চার্লি ছিল আমাদের আন্দোলনের এক যোদ্ধা, আমাদের দেশের ভবিষ্যতের জন্য এক অক্লান্ত সৈনিক।
জনপ্রিয় পডকাস্টার চার্লি কার্ক দ্রুত খ্যাতি অর্জন করেন একজন তীক্ষ্ণভাষী ট্রাম্পপন্থী কনজারভেটিভ হিসেবে। তিনি প্রায়ই কলেজ ক্যাম্পাসে বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় থাকতেন। খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদকে তিনি সঙ্গে নিয়ে চলতেন এবং প্রগতিশীলদের সঙ্গে কঠোরভাবে সংঘাতে জড়াতেন। সমালোচকেরা যখন তাকে মেরুকরণ উস্কে দেওয়ার অভিযোগ আনতেন, তিনি সেসব মন্তব্য উড়িয়ে দিতেন।
অতীতে তার বক্তৃতাগুলোতে তিনি সরাসরি অস্ত্রের অধিকারের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। একবার তো বলেছিলেন, “প্রতি বছর কয়েকজন গুলিতে মারা গেলেও সেটা মেনে নেওয়া যায়, কারণ দ্বিতীয় সংশোধনী আমাদের ঈশ্বরপ্রদত্ত অন্যান্য অধিকার রক্ষার জন্য অপরিহার্য।” ইউটাহ ভ্যালি ইউনিভার্সিটিতে তার সাম্প্রতিক উপস্থিতিকে ঘিরেও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। হাজার হাজার মানুষ অনলাইনে আবেদনপত্রে সই করে অনুষ্ঠানটি বাতিলের দাবি তুলেছিল। তবে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই সন্ত্রাসী হামলায় চার্লি কার্কের জীবনাবসান ঘটে।
