আজকাল ওয়েবডেস্ক: ব্রিটিশ অভিনেতা চার্লস ড্যান্স, যিনি গেম অব থ্রোন্স এবং দ্য ইমিটেশন গেম-এর মতো আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পরিচিত, সম্প্রতি দ্য টেলিগ্রাফ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রিটেনের মধ্যপ্রাচ্য নীতিকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছেন। ড্যান্স সরাসরি বলেন, “ব্রিটেন ১৯১৭ সালের ব্যালফোর ঘোষণার মাধ্যমে পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে নষ্ট করে ফেলেছে। ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ড যতদিন না এই ঘোষণা খণ্ডন করে ক্ষমা চায়, ততদিন ওই অঞ্চলে কোনও স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়।”
অভিনেতা আরও বলেন, “আমি এখন কিছুটা ‘অবসেসড’ হয়ে পড়েছি মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনার প্রতি। যেকোনো বিবেকবান মানুষই এর প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত। যুদ্ধ যদি আগামীকাল থেমেও যায়, ব্যালফোর ঘোষণা বাতিল না হলে শান্তি আসবে না। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডকে বলতে হবে, ‘আমরা ভুল করেছি, আমরা দুঃখিত।’”
চার্লস ড্যান্সের এই মন্তব্য তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সচেতনতারই প্রতিফলন। ২০২০ সালে তিনি আল জাজিরার সঙ্গে একটি ডকু-ড্রামা সিরিজে কাজ করেছিলেন, যা মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়। এছাড়া তিনি প্যালেস্টাইন ফেস্টিভাল অব লিটারেচারে অংশ নিয়ে গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছিলেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর ড্যান্স বহু আন্তর্জাতিক শিল্পীর সঙ্গে যৌথভাবে এক খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেন, যেখানে তিনি গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তা এবং ‘ইজরায়েলের প্রতি সমর্থন’ বন্ধের আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস ব্যালফোরের স্বাক্ষরিত ৬৭ শব্দের একটি চিঠিই ছিল তথাকথিত ব্যালফোর ঘোষণা। তাতে বলা হয়েছিল, ব্রিটিশ সরকার “প্যালেস্টাইনে ইহুদি জাতির জন্য একটি জাতীয় আবাস প্রতিষ্ঠার” পক্ষে।
যদিও ঘোষণায় একটি শর্তও ছিল—“এই প্রক্রিয়ায় যেন প্যালেস্টাইনের অ-ইহুদি জনগোষ্ঠীর নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকার ক্ষুণ্ণ না হয়।” কিন্তু বাস্তবে ব্রিটিশ সরকার এই অংশ উপেক্ষা করে। ঘোষণার অস্পষ্ট ভাষা, বিশেষ করে “ন্যাশনাল হোম” বা “জাতীয় আবাস” শব্দগুচ্ছ, পরবর্তীকালে ব্যালফোর নিজে এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড লয়েড জর্জ এমনভাবে ব্যাখ্যা করেন, যেন তা শুরু থেকেই “একটি ভবিষ্যৎ ইহুদি রাষ্ট্র” অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছিল।
ঘোষণার সময় প্যালেস্টাইনের মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশেরও বেশি ছিল আরব—মুসলমান ও খ্রিষ্টান। তবুও ব্রিটিশ সিদ্ধান্তে তাদের অধিকার সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, ব্যালফোর ঘোষণা ছিল উপনিবেশবাদী রাজনীতির একটি বড় মোড়, যা ১৯৪৮ সালের 'নাকবা' বা “বিপর্যয়”-এর ভিত্তি তৈরি করেছিল। ওই বছর ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় ৭ লক্ষ ৫০ হাজারেরও বেশি প্যালেস্টাইনি জোর করে উচ্ছেদ হন বা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।
চার্লস ড্যান্সের সাম্প্রতিক মন্তব্য সেই পুরোনো ইতিহাসের প্রতি নতুন করে আলোকপাত করেছে। ব্রিটিশ মিডিয়ার একাংশ ইতিমধ্যেই তাঁর বক্তব্যকে “বিতর্কিত” বলে অভিহিত করলেও, বহু মানবাধিকার কর্মী তাঁর বক্তব্যকে “বিবেকের আহ্বান” হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন। ড্যান্সের ভাষায়, “ইতিহাসের যে ক্ষত আমরা সৃষ্টি করেছি, তা মুছে না দিলে কোনও শান্তির প্রক্রিয়াই টেকসই হতে পারে না।”
