আজকাল ওয়েবডেস্ক: শহর কখনও ঘুমায় না। রাস্তার আলো জ্বলে, বিলবোর্ড ঝলমল করে, আর আকাশ আর কখনও পুরোপুরি অন্ধকার হয় না। মানুষের জন্য এই আলো রাতের পরও নানা কাজে সুবিধা দেয়। কিন্তু বন্যপ্রাণী, বিশেষ করে পাখিদের জন্য, এই কৃত্রিম আলোর আধিক্য জীবনের স্বাভাবিক ছন্দকে পাল্টে দিচ্ছে।
 
 একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব এলাকায় রাতে আকাশ কৃত্রিম আলোয় উজ্জ্বল হয়ে থাকে, সেখানে পাখিরা অনেক রাত অবধি গান গেয়ে চলেছে। সাউদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটির ফরেস্ট্রি ও হর্টিকালচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ব্রেন্ট পিস এবং ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নীল গিলবার্ট, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগৃহীত ১৮ কোটি পাখির ডাক বিশ্লেষণ করেন।
আরও পড়ুন: ভারতে বাড়ছে ক্রেডিট কার্ড প্রতারণা, এই পাঁচটি উপায় মানলেই কেল্লাফতে
 
 তারা এই ডাকগুলোকে স্যাটেলাইটের আলোকচিত্রের সঙ্গে তুলনা করে দেখেছেন পাখিরা কৃত্রিম আলোতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়। প্রথমে এটি ছিল সৃজনশীল প্রচেষ্টা, যাতে স্নাতক শিক্ষার্থীরা প্রকৃতিতে আগ্রহী হয়। তিনি টাচ অফ নেচার আউটডোর এডুকেশন সেন্টার-এ একটি মাইক্রোফোন বসিয়ে সেটির শব্দ পাঠাতেন মাইল দূরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিদ্যা ভবনে। ফলে শিক্ষার্থীরা ভবনের পর্দায় সরাসরি দেখতে পারত কোন প্রজাতির পাখি সক্রিয়।
 
 পরবর্তীতে পিস বার্ডওয়েদার নামক যন্ত্র ব্যবহার করেন। এগুলো ওয়াই-ফাই, জিপিএস ও সেন্সরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বার্ডনেট-এ তথ্য পাঠায়—যা কর্নেল ল্যাব অফ অর্নিথোলজি এবং জার্মানির কেমনিৎস ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি তৈরি করেছে। এতে রিয়েল-টাইম ড্যাশবোর্ডে দেখা যাচ্ছিল আশেপাশে কোন পাখিরা আছে।

 
 তিনি আরও জানান, এটি ছিল বন্যপ্রাণী গবেষণার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। “এখন আমরা শুধু জানতে পারছি না কোথায় কোন প্রজাতি আছে, বরং ২৪ ঘণ্টা ধরে কেমন আচরণ করছে সেটিও বোঝা যাচ্ছে।”
 
 বার্ডওয়েদার পাখি গবেষণায় এক বিপ্লব ঘটিয়েছে, যেমন কয়েক দশক আগে ট্রেইল ক্যামেরা স্তন্যপায়ী প্রাণীর গবেষণায় করেছিল। পিস বলেন, “আমরা পাখি সংরক্ষণের সোনালী যুগে প্রবেশ করছি—মেশিন লার্নিং ও জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে,”। বার্ডনেট-এর সাহায্যে গবেষকরা অডিও রেকর্ডিংকে স্পেকট্রোগ্রামে রূপান্তর করেন, যা প্রতিটি প্রজাতির স্বতন্ত্র ডাককে দৃশ্যমান করে। এরপর সেগুলো ৬,০০০-এরও বেশি প্রজাতির ডাটাবেসের সঙ্গে তুলনা করা হয়। তিনি জানান, “এই মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টার অডিও রেকর্ড বিশ্লেষণ সম্ভব হচ্ছে, যা মানুষের শুনতে একটি জীবনকাল লেগে যেত।”
 
 তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, গড়পড়তা বিশ্রামের সময় প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে হচ্ছে, তবে সব প্রজাতি সমানভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে না। পিস বলেন, “আমাদের প্রশ্ন ছিল—কেন? কোন কারণে পাখিরা এভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে? আমরা ভেবেছিলাম হয়তো বিষয়টা চোখের আলোকসংবেদনশীলতার সঙ্গে সম্পর্কিত। এবং সেটাই মূল কারণ হিসেবে বেরিয়ে এসেছে।” যেসব প্রজাতির শরীরের তুলনায় চোখ বড়, তাদের রাতে আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা বেশি, ফলে তারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে।

 
 পরিপূরক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শব্দদূষণও ভূমিকা রাখে। সড়কের কাছে থাকা পাখির আচরণ দূরের তুলনায় আলাদা। তবে সবচেয়ে ধারাবাহিক পরিবর্তন এসেছে কেবল আলো থেকে, শব্দ থেকে নয়। আশ্চর্যের বিষয়, নিশাচর প্রজাতি ঠিক উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। উজ্জ্বল পরিবেশে তারা কম ডাকছে এবং তাদের সক্রিয় সময় ছোট হয়ে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, অন্ধকার এলাকায় এক নিশাচর পাখি রাতে গড়ে ১.৬ বার ডাকছে, কিন্তু উজ্জ্বল এলাকায় সেটি নেমে এসেছে প্রায় ১.১ বারে। চাঁদের আলোও এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। কখনও কার্যকলাপ বাড়িয়েছে আবার কখনও কমিয়েছে।
