আজকাল ওয়েবডেস্ক: দক্ষ জনশক্তির এইচ-১বি ভিসা আবেদনের ফি এক লাখ ডলার করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। তারপরই প্রশ্ন উঠেছে যে, চিকিৎসকদের ক্ষেত্রেও কি এই চড়া অঙ্কের ভিসা ফি কার্যকর হবে? এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এইচ-১বি ভিসার এই এক লাখ ডলারের ফি দেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের ছাড় মিলতে পারে।

ব্লুমবার্গ নিউজকে এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র টেইলর রজার্স জানান, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষরিত ঘোষণায় সম্ভাব্য ছাড়ের সুযোগ রাখা হয়েছে, যার আওতায় চিকিৎসক ও মেডিকেল রেসিডেন্টদের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। 

গত সপ্তাহে প্রকাশিত নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছিল, যদি মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি নির্দিষ্ট কর্মীদের ব্যক্তিগতভাবে বা কোনও নির্দিষ্ট সংস্থা বা শিল্পের জন্য নিয়োগকে 'জাতীয় স্বার্থবাহী' বলে মনে করেন, তাহলে এই বিশাল অঙ্কের আবেদন ফি মুকুব করা যেতে পারে। এ নিয়ে রজার্সেহর স্পষ্ট বক্তব্য, "তবে শেষ পর্যন্ত ঘোষণাপত্রের ভাষ্য অনুযায়ীই কাজ করবে ট্রাম্প প্রশাসন।" 

এই প্রশ্ন উঠেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি চিকিৎসা সংগঠনের উদ্বেগ প্রকাশের পর। সংগঠনের তরফে সতর্ক করে বলা হয় যে, আমেরিকার গ্রামাঞ্চলগুলি দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসকের সংকটে ভুগছে। এ অবস্থায় এমন চড়া অঙ্কের ফি আরোপে সিদ্ধান্ত চিকিৎসকের সংকটকে আরও তীব্রতর করতে পারে। চিকিৎসকেরা সতর্ক করে বলছেন, প্রস্তাবিত ভিসা ফি-র ফলে যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক মেডিকেল গ্র্যাজুয়েটদের সংখ্যা মারাত্মকহারে কমতে পারে।

হোয়াইট হাউস এইচ-১বি ভিসা আবেদনের জন্য এক লাখ ডলার ফি ঘোষণা করেছে। বর্তমানে এই ফি ২১৫ ডলার এবং এর সঙ্গে কিছু আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়াকরণ খরচ যুক্ত হয়।

গত শুক্রবার এই ভিসা আরোপের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর অস্বস্তি বেড়ে যায় মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলির, বিশেষ করে যারা এই ভিসারএইচ-১বি ভিসার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক দক্ষ জনশক্তি ব্যবহার করছিল। তবে পরে হোয়াইট হাউস সেইসব উদ্বিগ্ন সংস্থাগুলোকে আশ্বস্ত করেছে। প্রশানের যুক্তি, এই ফি পুরোনো ভিসা হোল্ডার বা ভিসা নবীতকরণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাদের এইচ-১বি কর্মীরা বিদেশে ভ্রমণ করলে এক লাখ ডলার ফি ছাড়াই আবার আমেরিকায় প্রবেশ করতে পারবেন। নতুন নীতিটি গত রবিবার রাত ১২টা বেজে এক মিনিট থেকে কার্যকর হয়েছে।

আরও পড়ুন-  হনুমান জি 'ভুয়ো হিন্দু দেবতা', আমেরিকায় রিপাবলিকান নেতার মন্তব্যে তুঙ্গে বিতর্ক, নিন্দার ঝড়

এইচ-১বি ভিসার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন এবং স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রিধারী বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এই ভিসার মেয়াদ তিন বছর, যা আরও তিন বছর বাড়ানো যায়।

ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ স্টিফেন ব্রাউন সোমবার এক মন্তব্যে লিখেছেন, "এ থেকে বোঝা যায় যে বর্তমানে দেশে প্রায় সাত লাখ এইচ-১বি ভিসাধারী কর্মী এবং আরও প্রায় পাঁচ লাখ নির্ভরশীল ব্যক্তি রয়েছেন।"

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সাল থেকে অনুমোদিত এইচ-১বি ভিসার অন্তত ৬০ শতাংশ কম্পিউটার সম্পর্কিত চাকরির জন্য দেওয়া হয়েছে। তবে হাসপাতাল, ব্যাঙ্ক, বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানও এই ভিসার জন্য আবেদন করে থাকে।

প্রতি বছর নতুন করে ইস্যু করা এই ভিসার সংখ্যা সর্বোচ্চ ৬৫ হাজারে সীমিত। এর সঙ্গে স্নাতকোত্তর বা তার বেশি ডিগ্রিধারীদের জন্য অতিরিক্ত ২০ হাজার ভিসা বরাদ্দ থাকে। এসব ভিসা লটারির মাধ্যমে বণ্টন করা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো এই সীমার আওতামুক্ত।

পিউ রিসার্চের হিসাবে, ২০২৩ সালে অনুমোদিত এইচ-১বি ভিসাধারীদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই ভারত থেকে।