আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইন্দোনেশিয়ার তেরনাতে দ্বীপের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত ফোর্ট টোলুক্কো—আকারে ছোট হলেও ইতিহাসে এক বিস্ময়কর অধ্যায়ের সাক্ষী। ১৫২২ সালে নির্মিত এই দুর্গের জন্ম হয়েছিল পর্তুগিজদের হাত ধরে, যখন মালুকু দ্বীপপুঞ্জে মসলা বাণিজ্যের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ছিল ইউরোপীয় শক্তিগুলির প্রধান লক্ষ্য।
কেন বেছে নেওয়া হয়েছিল তেরনাতের পূর্ব উপকূল
পর্তুগিজরা দুর্গ নির্মাণের জন্য তেরনাতের পূর্ব উপকূলকে বেছে নেয় মূলত ভৌগোলিক কারণে। এখান থেকে সমুদ্রপথ নিয়ন্ত্রণ, সম্ভাব্য শত্রুর আগমন পর্যবেক্ষণ এবং আশেপাশের বাণিজ্য রুটে নজরদারি সম্ভব ছিল। দুর্গের আকৃতি দণ্ডাকার বা ফ্যালিক বলে বিতর্ক থাকলেও, ঐতিহাসিকদের মতে এর নকশা স্থানীয় ভূপ্রকৃতির ফল, কারণ এটি সরু উপকূলীয় ভূমিখণ্ডে নির্মিত।
আরও পড়ুন: স্তনের আকারের মতোই পুরুষকে ‘টাকলা, টেকো' বলা যৌন হয়রানি! কর্মক্ষেত্রের ট্রাইব্যুনালের ঐতিহাসিক রায়
দখল বদলের জটিল ইতিহাস
প্রথমে পর্তুগিজ নিয়ন্ত্রণে থাকা দুর্গটি পরে তেরনাতে সুলতানাতের দখলে যায় এবং স্থানীয় প্রতিরক্ষায় ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ১৬ ও ১৭ শতকে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্রতর হলে দুর্গটির মালিকানা বারবার বদলায়। ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (VOC) মসলা বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য দুর্গটি দখল করে এবং সামরিক সুরক্ষা বাড়ায়। ব্রিটিশরা স্বল্প সময়ের জন্য দুর্গ নিয়ন্ত্রণে নেয়, যা ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক দ্বন্দ্বের প্রতিফলন। স্প্যানিশ নৌবাহিনী ১৭ শতকে ফিলিপাইনের উপনিবেশ থেকে এসে দুর্গ দখল করে মালুকু অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালায়। ফলে ফোর্ট টোলুক্কো এমন এক ঐতিহাসিক স্থান হয়ে ওঠে, যেখানে পর্তুগিজ, ডাচ, ব্রিটিশ, স্প্যানিশ ও স্থানীয় তেরনাতে সুলতানাত—সবাই কোনো না কোনো সময়ে কর্তৃত্ব করেছে। প্রতিটি দখলদারই নিজেদের সামরিক প্রয়োজন অনুযায়ী দুর্গের কাঠামোতে পরিবর্তন এনেছে।
মশলা বাণিজ্যের হৃদয়ে কৌশলগত দুর্গ
আকারে ছোট হলেও ফোর্ট টোলুক্কোর কৌশলগত গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এটি উপকূলীয় প্রতিরক্ষার পাশাপাশি মালুকুর মসলা বাণিজ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দিয়েছিল। তৎকালীন বিশ্ব অর্থনীতিতে মসলার এত গুরুত্ব ছিল যে, এই ছোট্ট দুর্গকে ঘিরেই ঘটেছে বহু আন্তর্জাতিক সংঘর্ষ ও কূটনৈতিক টানাপোড়েন।
আজকের দিনে ফোর্ট টোলুক্কো
বর্তমানে ফোর্ট টোলুক্কো ইতিহাসপ্রেমী ও পর্যটকদের জন্য এক আকর্ষণীয় স্থান। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে উপনিবেশবাদী প্রতিযোগিতা, সামুদ্রিক বাণিজ্য ও স্থানীয় প্রতিরোধের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই দুর্গ আজও প্রমাণ করে—আকারে ছোট হলেও কৌশলগতভাবে একটি স্থাপনা বিশ্ব ইতিহাসের বৃহৎ অধ্যায়ে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
