আজকাল ওয়েবডেস্ক: এক অবিশ্বাস্য এবং শিউরে ওঠার মতো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলেন থাইল্যান্ডের একজন সাধারণ নাগরিক থানাত থাংথেওয়ানন। প্রতিদিনের মতোই তিনি বাড়ির টয়লেটে বসেছিলেন। কিন্তু অজান্তেই নিচে লুকিয়ে ছিল প্রায় ১২ ফুট লম্বা এক অজগর সাপ। আচমকাই সাপটি লাফিয়ে উঠে তাঁর পুরুষাঙ্গে কামড় বসায়। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় থানাত প্রথমে হতবাক হয়ে গেলেও দ্রুতই সাপটিকে ঘাড় চেপে ধরে পাশের টয়লেট ব্রাশ দিয়ে আঘাত করতে শুরু করেন। কয়েক মিনিটের প্রাণপণ লড়াইয়ের পর তিনি সাপটিকে মেরে ফেলতে সক্ষম হন।

আক্রমণের ফলে মুহূর্তেই বাথরুম রক্তে ভরে যায়। পরিবারের সদস্যরা ছুটে এসে থানাতকে হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা জানান, কামড়ের ক্ষত গুরুতর হলেও ভাগ্যক্রমে বড় ধরনের অস্ত্রোপচারের দরকার পড়েনি। তাঁকে টিটেনাস ইনজেকশন দেওয়া হয় এবং কয়েক ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। ডাক্তারদের ভাষায়, “এ ধরনের আঘাত সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করে। তবে এই ক্ষেত্রে তিনি ভাগ্যবান।” থাইল্যান্ডে বর্ষাকালে নর্দমা ও পাইপলাইনের ভেতর দিয়ে প্রায়ই সাপ মানুষের বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ে। বিশেষ করে পাইথন ও কোবরা প্রজাতির সাপ টয়লেটে উঠে আসার ঘটনা আগেও ঘটেছে।

আরও পড়ুন: কিয়েভে রাশিয়ার ভয়াবহ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, নিহত অন্তত ১২, আহত বহু

২০১৬ সালে ব্যাংককের এক ব্যক্তি টয়লেটে বসে থাকার সময় পাইথনের কামড়ে গুরুতর আহত হন। ২০২১ সালে দক্ষিণ থাইল্যান্ডে এক মহিলা টয়লেট থেকে উঠে আসা সাপের কবলে পড়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। গত বছর চিয়াং মাই শহরে একটি বাড়ির টয়লেটে ঢুকে পড়া পাইথনকে উদ্ধার করতে স্থানীয় দমকল বাহিনীকে ডাকতে হয়েছিল। এইসব ঘটনার কারণে থাই প্রশাসন বারবার সতর্কতা জারি করছে—টয়লেটে ঢোকার আগে আলো জ্বালিয়ে, জল  ফ্লাশ করে এবং ভেতরটা ভালোভাবে খতিয়ে দেখার জন্য।

অজগর বিষাক্ত নয়, তবে তাদের শক্ত কামড় ও কুণ্ডলী পাকিয়ে চেপে ধরার প্রবণতা মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে। প্রাণীবিদদের মতে, সাপ যখন হঠাৎ মানুষের সংস্পর্শে আসে, তখন আত্মরক্ষার্থেই আক্রমণ করে। তবে সাপকে খালি হাতে ধরে মেরে ফেলার মতো ঘটনা সচরাচর শোনা যায় না। থানাতের এই লড়াই তাই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে।

ঘটনার ছবি এবং বিবরণ প্রকাশ্যে আসতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। কেউ কেউ থানাতকে ‘সাহসী নায়ক’ আখ্যা দিচ্ছেন, আবার অনেকে বলছেন, এই ঘটনা মানুষের প্রতি প্রকৃতির স্পষ্ট সতর্কবার্তা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নগরায়নের ফলে সাপসহ বহু বন্যপ্রাণী মানুষের বসতিতে চলে আসছে। ফলে এ ধরনের সংঘাত আগামী দিনে আরও বাড়তে পারে।

থানাত থাংথেওয়াননের এই অভিজ্ঞতা ভয়ঙ্কর হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে তিনি এখন স্থিতিশীল আছেন। তবে এই ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—প্রকৃতি এবং মানুষের সীমারেখা যখন মুছে যেতে থাকে, তখন কতটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির জন্ম হতে পারে।