আজকাল ওয়েবডেস্ক: স্বামীর সঙ্গে মজার মুহূর্ত উপভোগ করছিলেন ছাদে বসে। স্বামী-স্ত্রী দু'জনেই গল্পে, আড্ডায় মেতেছিলেন। হঠাৎ ছাদের কিনারে ছুটে যান স্ত্রী। একেবারে কোণে ছাদের রেলিংয়ের উপরে বসে ঠাট্টা করছিলেন‌। স্বামীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তিনি যদি ধপ করে নীচে পড়ে যান? তাঁকে কি বাঁচাতে ছুটে আসবেন স্বামী? ঠাট্টার মাঝেই ঘটল বিপত্তি। 

 

ছাদে বসে গল্প, ঠাট্টার মাঝেই ভয়ঙ্কর বিপত্তি ঘটল। ছাদের রেলিং থেকে পা ফসকে পড়ে যান এক তরুণী। তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও, শেষরক্ষা হয়নি। স্ত্রীর মর্মান্তিক পরিণতিতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন স্বামী। জানালেন, এই দুর্ঘটনার আশঙ্কাই কয়েক মুহূর্ত আগে করছিলেন। ছাদের কিনারে দাঁড়িয়ে ঠাট্টা করছিলেন স্ত্রী। তাঁকে ভালবাসি কিনা, তাও জানতে চাইছিলেন। 

 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে ওড়িশার গাঞ্জাম জেলায়। পুলিশ জানিয়েছে, ২২ বছরের তরুণী একটি কল সেন্টারে কর্মরত ছিলেন। তাঁর স্বামীও একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। গত দুই বছর আগে তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সুখী দাম্পত্য ছিল তাঁদের। ডিএলএফ ফেজ টু-তে থাকতেন তাঁরা। নিজেদের আবাসনে দুর্ঘটনার জেরে তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। 

 

আরও পড়ুন: পিএম শ্রী স্কুলের এ কী দশা, ভরা ক্লাসে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল সিলিং ফ্যান, আহত একাধিক পড়ুয়া

 

মৃত তরুণীর স্বামী পুলিশকে জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার বিকেলে নিজেদের ফ্ল্যাটে সময় কাটাচ্ছিলেন তাঁরা। গল্প করার অজুহাতে ছাদে উঠতে চান তরুণী। সঙ্গে ছিলেন তিনিও। ছাদে উঠেও আড্ডায় মেতেছিলেন তাঁরা। গল্পের ফাঁকে হঠাৎ ছাদের কিনারে চলে যান তরুণী। ছাদের ধারে পা ঝুলিয়ে বসে জিজ্ঞেস করেন, তিনি যদি নীচে পড়ে যান, তাঁকে কি বাঁচাতে আসবেন? যদি সত্যিই ভালবাসেন, তাহলেই সঠিকভাবে রক্ষা করতে পারবেন তিনি। 

 

এই কথাটি বলার পরেই তরুণী হড়কে পড়ে যান। পা ফসকে নীচে পড়ার সময় দৌড়ে ছুটে আসেন স্বামী। খপ করে তাঁর হাত ধরেন‌। তরুণ জানিয়েছেন, দু'মিনিট স্ত্রীর হাত শক্ত করে ধরেছিলেন তিনি। সাহায্যের জন্য চিৎকার করে আশেপাশের মানুষদের ডেকেছিলেন। কিন্তু কেউ ছুটে আসেননি। চারতলা থেকে সোজা নীচে পড়ে যান তরুণী। 

 

তরুণ আরও জানিয়েছেন, নীচে নরম মাটিতে পড়ার পরেই গুরুতর চোট পান তরুণী। তাঁকে তড়িঘড়ি করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। আধঘন্টা চিকিৎসা চলাকালীন তাঁর হাসপাতালেই মৃত্যু হয়। ঘটনার বিবরণ শুনে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। কিন্তু তরুণীর পরিবারের তরফে কারো বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি‌। তাই দেহটি পরিবারের হাতেই তুলে দেওয়া হয়। 

 

তরুণীর স্বামী পুলিশকে জানিয়েছেন, 'আমরা বিয়ের পর খুব সুখী ছিলাম। দু'জনেই কর্মরত ছিলাম‌। ইচ্ছে ছিল, শীঘ্রই পরিবারে নতুন সদস্যের আগমন ঘটানোর। স্ত্রীর সঙ্গে সন্তানকে নিয়ে পরিকল্পনাও চলছিল। শীঘ্রই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ইচ্ছেও ছিল দু'জনের। বিয়ের দু' বছরের মধ্যে এত বড় সর্বনাশ ঘটবে, আমি ভাবতেও পারিনি। আমার দুর্ভাগ্য। হয়তো ভগবানের এমন ইচ্ছেই ছিল।' 

 

পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার জেরেই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। নেপথ্যে অন্য কোনও রহস্য নেই‌। মৃতার স্বামীর হাতে ও বুকে দাগ রয়েছে। যা থেকে স্পষ্ট ছাদের ধারে দাঁড়িয়ে তরুণীকে বাঁচানোর চেষ্টার সময়, ওই দাগ পড়েছে‌। তরুণীর পরিবারের তরফেও কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। দেহটি ময়নাতদন্তের পর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।