আজকাল ওয়েবডেস্ক: কর্নাটক নিয়ে ঘোর অস্বস্তিতে কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি বদলের আড়াই বছর ফর্মুলা আপাতত বিষ বাঁও জলে। নিজের সিদ্ধান্তে অনড় সিদ্দারামাইয়া। এদিকে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য মরিয়া উপ-মুখ্যমন্ত্রী শিবকুমারও। ক্ষমতা হস্তান্তরের যে ফর্মুলা সরকার গঠনের সময় গৃহিত হয়েছিল তা কার্যকর করতে কেন হিমশিম অবস্থা মল্লিকার্জুন খাড়গে, রাহুল গান্ধীদের?
ডি কে শিবকুমার শিবির এবং তাঁর অনুগামী মন্ত্রীদের সূত্র ইন্ডিয়া টুডেকে জানিয়েছে যে, সিদ্দারামাইয়া সরকারের মেয়াদের মাঝামাঝি সময়ে পদত্যাগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই সময়ে এগিয়ে এসেছে।
ভেঙে পড়ার পথে 'আড়াই বছর' ফর্মুলা
শিবকুমার শিবিরের সূত্র অনুসারে, মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এবং উপমুখ্যমন্ত্রী শিবকুমার- কংগ্রেস প্রধান মল্লিকার্জুন খাড়গে, কেসি বেণুগোপাল, রণদীপ সুরজেওয়ালা এবং শিবকুমারের ভাই সাংসদ ডি কে সুরেশের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর ২০২৩ সালের ১৮ মে ক্ষমতা ভাগাভাগির ফর্মুলা চূড়ান্ত করেছিলেন।
আলোচনার শুরুতে শিবকুমার প্রথম আড়াই বছর মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু বয়েসর কারণ দেখিয়ে সিদ্দারামাইয়া সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। এরপরই রফাসূত্র তৈরি হয়। ঠিক হয়, সিদ্দারামাইয়া প্রথম আড়াই বছর জন্য কর্নাচকের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসবেন। বাকি অংশের জন্য দায়িত্ব নেবেন শিবকুমার।
বৈঠকে শিবকুমারের ভাই সুরেশ দাবি করেছিলেন যে, এই রপাসূত্র জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক। কিন্তু কংগ্রেস হাইকমান্ড তা হতে দেয়নি। হাইকমান্ডের যুক্তি ছিল, রফাসূত্র প্রকাশ করা হলে তা সরকারকে অস্থির করে তুলতে পারে। সেই সময়, সিদ্দারামাইয়া- সুরেশের দিকে ফিরে বলেছিলেন, "সুরেশ, আমি সিদ্দারামাইয়া। আমি আমার প্রতিশ্রুতিতে অটল থাকব। আড়াই বছর পূর্ণ করার এক সপ্তাহ আগে, আমি পদত্যাগ করব।"
সিদ্দারামাইয়ার "নৈতিক বাধ্যবাধকতা" যুক্তি
শিবকুমার শিবিরের প্রতি সহানুভূতিশীল দলীয় নেতারা যুক্তি দেন যে, নৈতিকতার বিচারে কংগ্রেস তাঁকে বছরের পর বছর ধরে যেসব পদ দিয়েছে তাতে সন্তুষ্ট থাকা উচিত তাঁর। সিদ্দারামাইয়া প্রায় পাঁচ বছর ধরে বিরোধী দলের নেতা, সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে মুখ্যমন্ত্রী এবং পরে দেড় বছর ধরে সমন্বয় কমিটির সভাপতি দায়িত্ব পালন করেছেন।
তারা জোর দিয়ে বলেন যে, শিবকুমার যদি শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তাহলে সিদ্দারামাইয়াকে অবশ্যই দলকে "প্রতিদান" দিতে হবে, যা তাঁকে প্রতিহত করার পরিবর্তে ক্ষমতা পরিবর্তনের একটি মসৃণ সুবিধা প্রদান করে।
মন্ত্রীদের প্রতি দিল্লির বার্তা
শিবকুমারের সঙ্গে জোটবদ্ধ মন্ত্রীরা স্মরণ করেন যে, মন্ত্রিসভা গঠনের সময় এআইসিসি নেতারা তাঁদের বলেছিলেন যে- তাঁরা প্রথম আড়াই বছর ধরে এক গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতা দেবেন, তারপরে নেতৃত্বের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রদবদল হবে।
ডিকে শিবকুমার শিবির সূত্র অনুসারে, সিদ্দারামাইয়া একাধিকবার ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের আড়াই বছরের ফর্মুলা স্বীকার করেছিলেন, এবং হাইকমান্ড তাঁকে নির্দেশ দিলে পদত্যাগ করতে করবেন বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেছন।
এরপরই ঘটনায় নয়া মোড়
মাসের পর মাস ধরে জল্পনা-কল্পনার পর জনসমক্ষে সিদ্দারামাইয়া তাঁর সুর বদল করেন। প্রাথমিকভাবে, তিনি প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, "কংগ্রেস সরকার পাঁচ বছর পূর্ণ করবে।"
২ জুলাই তাঁর অবস্থান কঠোর হয়ে ওঠে, যখন তিনি বলেছিলেন যে- তিনি পুরো মেয়াদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। চলতি বছর ৫ জুলাই থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি সেই অবস্থানেই অনড় থাকেন। কিন্তু ২২ নভেম্বর বেঙ্গালুরুতে খাড়গের সঙ্গে গভীর রাতে বৈঠকের পর, সিদ্দারামাইয়ার সুর কিছুটা নরম হয়ে যায়। তিনি বলেন, "ক্ষমতা ভাগাভাগির বিষয়ে হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নেবে।" কিন্তু, দুই দিন পরে, সিদ্দারামাইয়া ফের বলেন, "যদি হাইকমান্ড চায়, আমি মুখ্যমন্ত্রিত্ব চালিয়ে যাব।"
সিদ্দারামাইয়ার ডিগবাডি:
সিদ্দারামাইয়ার ভোলবদল আগেও নজরে এসেছে-
২০১৩: বলেছিলেন সেটিই তাঁর শেষ নির্বাচন।
২০১৮: ফের ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, চামুণ্ডেশ্বরীতে হেরেছিলেন এবং বাদামিতে জয়লাভ করেছিলেন।
২০২৩: আবারও ওই নির্বাচনকে তাঁর শেষ নির্বাচন বলেছিলেন এবং মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথম আড়াই বছর দাবি করেছিলেন।
দলের অভ্যন্তরে তাই সিদ্দারামাইয়ার বর্তমান অবস্থানকে তাঁর ভোলবদলেরই অংশ হিসাবে দেখা হচ্ছে।
ডিকে শিবকুমারের অবস্থান?
শিবকুমার প্রকাশ্যে সংযত রয়েছেন। তাঁর শিবিরের নেতারা বলছেন যে, কর্নাটকের রাজনৈতিক কাঠামোতে বিদ্রোহ অসম্ভব। তাই আপাতত ধৈর্য ধরে থাকাই একমাত্র কার্যকরী কৌশল হতে পারে। তাঁর অনুগামী বিধায়করা বর্তমানে দিল্লিতে রয়েছেন, খর্মুলা বাস্তবায়নের জন্য নেতৃত্বকে চাপ দিচ্ছেন।
সিদ্দারামাইয়া গোষ্ঠী পিছু হটছে
ইন্ডিয়া টুডে-র সাথে একান্ত আলাপচারিতায়, সিদ্দারামাইয়ার আর্থিক উপদেষ্টা এবং মুখ্যমন্ত্রী শিবিরের একজন সিনিয়র ব্যক্তিত্ব বাসবরাজ রায়রেডি, দিল্লির ক্রমবর্ধমান চাপকে খোলাখুলিভাবে চ্যালেঞ্জ করেছেন।
সাক্ষাৎকারে, রায়রেডি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে- দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে একটি দৃঢ় যুক্তি ছাড়া সিদ্দারামাইয়া পদত্যাগ করবেন না।
রায়রেডির মতে:
সিদ্দারামাইয়া "পূর্ণ পাঁচ বছর ধরে বহাল থাকবেন"। ২০২৩ সালে যখন সিদ্দারামাইয়া মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন, তখন হাইকমান্ড "কখনও বলেননি" যে তাঁর কার্যকাল আড়াই বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ। যদি সিদ্দারামাইয়া এবং শিবকুমারের মধ্যে কোনও বোঝাপড়া থাকে, তবে "কেউ তা জানে না।"
মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই তাঁকে মার্চের বাজেট তৈরি শুরু করতে বলেছেন, ইঙ্গিত দিয়েছেন যে- ক্ষমতা তাড়াতাড়ি হস্তান্তরের কোনও পরিকল্পনা নেই। যদি দল সিদ্দারামাইয়াকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে নেতৃত্বকে "পরিষদীয় দলের সভা ডাকতে হবে এবং সমস্ত বিধায়কদের ব্যাখ্যা করতে হবে কেন এই অপসারণ।"
রায়ডির সিদ্দারামাইয়াকে অপসারণের কারণ জানতে চান এবং দাবি করেন এই মুখ্যমন্ত্রীর গায়ে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ নেই, তাই তিনি ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী।
অস্বাভাবিকভাবে এই সব মন্তব্য, পাল্চা যুক্তিই কংগ্রেস হাইকমান্ডকে বিচলিত করেছে। স্পষ্ট হচ্ছে যে, সিদ্দারামাইয়াকে রক্ষা করতে মুখ্যমন্ত্রী শিবিরও মরিয়া। অন্যদিকে চুপ থেকে চাপ বাড়াচ্ছেন শিবকুমার গোষ্ঠী।
